পূর্ব মেদিনীপুরের নয়াচর দ্বীপ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পক্ষে উপযুক্ত নয় বলে প্রাথমিক ভাবে জানাল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
তাদের বক্তব্য, ওই এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণ ভাবে প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদজগতের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই নয়াচরে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। তার পরেই সেখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া যাবে কিনা, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এই অবস্থানের ফলে নয়াচরে শিল্প গড়ার পথে সংশয় তৈরি হল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
নয়াচরে মোট ৭০০ একর জমিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য পরিবেশ দফতরের কাছে ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করেছিল ইউনিভার্সাল ক্রিসেন্ট পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা। যার মালিক অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। সোমবার জাকার্তা থেকে তিনি বলেন, “এই প্রকল্প মোটেই বাতিল হয়নি। কোনও মহল থেকে এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হলে সেটা নিছক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।” প্রসূনবাবুর দাবি, কয়েকটি বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। |
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে বলা হচ্ছে, যে নয়াচর দ্বীপে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে নদীর তীর ঘেঁষে যে ম্যানগ্রোভ (লবণাম্বু উদ্ভিদ) অরণ্য রয়েছে, তার কোনও উল্লেখ সংস্থার আবেদনপত্রে ছিল না। তাতে বলা হয়েছিল, গোটা প্রকল্পটিই গড়ে উঠবে উপকূল নিয়ন্ত্রণ এলাকার (কোস্টাল রেগুলেটরি জোন) বাইরে। ফলে সেখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে কোনও সমস্যা নেই। ২০১১-এর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে রাজ্য যে সুপারিশ পাঠিয়েছিল, তাতে নয়াচরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও একটি শিল্প তালুক এবং পরিবেশ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে এবং খোঁজখবর নিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দেখেছে, নয়াচরের যে অংশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কথা বলা হয়েছে, তার পরিবেশগত অবস্থান খুবই সংবেদনশীল। সেখানে কোনও জনবসতিও নেই। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাড়পত্রের জন্য আবেদনে
এই বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তাদের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেছে। যখন তাদের কাছে ওই প্রকল্পের ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছিল, তখন গোটা প্রকল্পটি রাসায়নিক শিল্পতালুকের (পিসিপিআইআর) অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে সংস্থা দাবি করেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওই রাসায়নিক শিল্পতালুকের কোনও অস্তিত্বই নেই। প্রসূনবাবু এ দিন জানান, পর্ষদের তোলা যাবতীয় প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে তাঁরা তৈরি হচ্ছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলে যাক, এটা মুখ্যমন্ত্রী কোনও অবস্থাতেই চান না। তাই তাঁর নির্দেশে ও নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ ও পরিবেশ দফতর এবং শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রতিনিধিরা ছাড়াও আমাদের সংস্থার প্রতিনিধিরা ওই কমিটিতে থাকবেন। পর্ষদের তোলা প্রশ্নের জবাব যথাসময়েই তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।” নয়াচরের প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাথমিক সিদ্ধান্তে রাজ্যের অসন্তোষের কথা গোপন করেননি শিল্পমন্ত্রী। |