উত্তপ্ত ধনেখালির দুই গ্রাম
তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ প্রহৃত কর্মী, দুই বাড়িতে ভাঙচুর
তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র জেরে রবিবার রাতে তেতে ওঠে হুগলির ধনেখালির সমসপুর-১ পঞ্চায়েতের দু’টি গ্রাম। দলের এক নেতা ও কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রহৃত হন এক তৃণমূল কর্মী। রাতভর চলে বোমাবাজি। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। গোলমালের রেশ ছিল সোমবার সকালেও। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় বেশ কিছু যুবককে। শেষমেশ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে গ্রামে টহলদারি শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দুপুরে ঘটনাস্থলে যান তৃণমূলের হুগলি জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি বলেন,“ধনেখালিতে দলে একটা গণ্ডগোল হয়েছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলীয় ভাবে এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ধনেখালির গণ্ডগোলের জেরে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
তৃণমূলের একাংশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ধনেখালির দলীয় বিধায়ক অসীমা পাত্রের গোষ্ঠীর সঙ্গে বিবাদ চলছে দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের গোষ্ঠীর। রবিবার সেই বিবাদের জেরেই গোলমাল।
ছড়িয়ে রয়েছে তাণ্ডবের চিহ্ন। ছবি: তাপস ঘোষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোলমালের সূত্রপাত রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ অনন্তপুর গ্রামে। দলীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূল কর্মী সৌমেন ঘোষ (পটল)। তিনি অসীমাদেবীর ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ, সেই সময়ে তপন গোষ্ঠীর লোকজন তাঁকে বাঁশ দিয়ে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। তাঁর মোটরবাইক পুকুরে ফেলে দেয়। সৌমেনকে প্রথমে ধনেখালি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এর পরে গোলমাল ছড়ায় পাশের আলা গ্রামে। এই গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অধিকাংশই তপন গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। অভিযোগ, সৌমেনকে মারের বদলা হিসেবে অসীমা গোষ্ঠীর প্রায় ৫০-৬০ জন যুবক মোটরবাইকে এসে চড়াও হয় সমসপুর-১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি প্রসাদ লাহার বাড়ি। বোমাবাজি করতে করতে তারা এলাকায় ঢোকে। তবে, বোমার আঘাতে কেউ জখম হননি। ‘ডাকাত’ এসেছে ভেবে প্রসাদবাবুর পড়শিরা বাড়ির ছাদে উঠে পড়েন। প্রসাদবাবু-সহ তাঁর পরিবারের সকলকে ঘরে ঢুকিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বাড়ি লাগোয়া প্রসাদবাবুর কারখানাতেও। হামলাকারীরা হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। এর পরে প্রসাদবাবুর বাড়ির পাশে, আর এক তৃণমূল কর্মী জিতেন্দ্রনাথ কুণ্ডুর বাড়িতেও হামলা হয়। জানলা ভেঙে বাঁশ ঢুকিয়ে টিভি ভেঙে দেওয়া হয়।
প্রসাদবাবু বলেন, “সিপিএমের রাজত্বে অত্যাচারিত হয়েছিলাম। এখন নিজেদের দলের লোকজনের হাতেও একই ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছি। আসলে সিপিএম ছেড়ে দলের আসা কিছু লোকজনই এই সন্ত্রাস করছে। দলের বদনাম করছে। আগেও ওরা হামলা করেছিল, এখনও করল।”
রাতে পুলিশ দু’টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিলেও মাঝেমধ্যেই বোমার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। সকালেও ছিল উত্তেজনা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সকালেও দু’ঠি গ্রামে কিছু যুবককে হাতে কুড়ুল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। আতঙ্কে পথচারীরা পালান। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
অসীমাদেবী অবশ্য গোলমালের পিছনে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “সিপিএমের লোকজনই এর পিছনে রয়েছে। এতে দলের কেউ জড়িত নয়। কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই।” হুগলির প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ পাল বলেন, “ধনেখালির ঘটনায় সিপিএমের কেউ যুক্ত নয়। নিজেদের মধ্যে লুঠের বখরা নিয়ে গোলমাল করছে তৃণমূল আর আমাদের নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।” তপনবাবু বলেন,“ধনেখালিতে গোলমাল হয়েছে জানি। গণ্ডগোলে আমাদের কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.