মানেসরের মারুতি কারখানায় হিংসার পিছনে তাদের হাত না থাকলেও, ওই ঘটনার পরে মাওবাদীরা শ্রমিকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল। হরিয়ানার ওই কারখানার শ্রমিকদের মন জয় করতে মাওবাদীদের বেশ কিছু প্রকাশ্য সংগঠন মারুতির বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ‘পাশে দাঁড়ানো’-র চেষ্টা করেছিল। এখনও সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এদের মধ্যে বেশ কিছু সংগঠন পশ্চিমবঙ্গেও সক্রিয়।
মাস খানেক আগে মানেসরের কারখানায় সংঘর্ষে সংস্থার এক উচ্চ পদস্থ কর্তার মৃত্যু হয় এবং ১০০ জন জখম হন। তার পরেই ওই হামলার পিছনে মাওবাদীদের প্ররোচনা রয়েছে কি না, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, তেমন প্রমাণ মেলেনি। তবে হামলার পরে মাওবাদীদের বেশ কয়েকটি প্রকাশ্য সংগঠন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল সংগঠন মানেসরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সামিল হয়। এদের মধ্যে বন্দি মুক্তি কমিটি, পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্ট্স ইউনিয়ন, মেহনতকশ মজদুর মোর্চার মতো সংগঠনগুলি অন্যতম। মারুতির কর্মীদের সমর্থন জানিয়ে দিল্লি ও তার আশেপাশের এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে সমর্থনের ভিত্তি গড়ে তোলাই ছিল এই সংগঠনগুলির উদ্দেশ্য। এক মাস বন্ধ থাকার পরে দিন কয়েক আগে থেকে ফের সেই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাওবাদীদের গতিবিধির কথা মাথায় রেখেই সেখানে বিরাট সংখ্যায় পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু মারুতি নয়, অতীতে দিল্লি-সংলগ্ন গুড়গাঁওয়ের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষকেও মাওবাদীরা কাজে লাগাতে চেয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য।
মাওবাদীরা কি তা হলে এ বার রাজধানী-শহরে শিকড় ছড়াতে চাইছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, মাওবাদীদের সাংগঠনিক দলিলেই এই পরিকল্পনার কথা বলা রয়েছে। ২০০৭ সালে ‘আরবান পার্সপেক্টিভ’ নামে একটি দলিল তৈরি করে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠন। সেই দলিলেই শহরাঞ্চলে শ্রমিকদের সংগঠিত করে, তাদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়। তার সঙ্গে ‘অ্যাকশন টিম’ তৈরি করে নির্দিষ্ট খুনের হামলার ছক কষার কথাও বলা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, মাওবাদীদের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনার তিনটি দিক রয়েছে। এক, পিপল্স লিবারেশন গেরিলা আর্মির মাধ্যমে সশস্ত্র যুদ্ধ, দুই, প্রকাশ্য গণসংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং তিন, অন্য জঙ্গি-সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কৌশলগত সংযুক্ত ফ্রন্ট গড়ে তোলা। তবে তাঁর বক্তব্য, “এখনও পর্যন্ত শহরাঞ্চলে মাওবাদীরা সেই ভাবে সফল হয়নি। কারণ মাওবাদীরা নিজেদের এলাকায় যে ধরনের খুনের রাজনীতি ও নির্যাতন চালিয়ে এসেছে, শহরের বাসিন্দারা তা সমর্থন করেননি।” |