তাঁর মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ৩১ লক্ষ টাকা। কথা ছিল, তাঁকে ধরতে বা মারতে পারলে ওই অর্থ ইনাম মিলবে।
কিন্তু জীবিত কিষেণজিকে নিয়ে সরকারের যে মাথাব্যথা ছিল, মৃত্যুর পরে তা বুঝি অন্তর্হিত। তাই মাওবাদী শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পরে ন’মাস কেটে গেলেও সিআরপিএফের ‘সফল’ জওয়ানেরা প্রতিশ্রুতিমাফিক পুরস্কার পাননি। বাধ্য হয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের হস্তক্ষেপ চাইলেন সিআরপি-কর্তৃপক্ষ। সিআরপি-র আইজি বিবেক সহায় বিষয়টি নিয়ে দিন কয়েক আগে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন বলে দফতর-সূত্রের খবর।
পূর্ব ও মধ্য ভারত জুড়ে মাওবাদী কার্যকলাপের বাড়বাড়ন্ত চলাকালীন কিষেণজি-র ‘মাথার দাম’ ঘোষণা করেছিল ওড়িশা, ছত্তীসগড় এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। গোয়েন্দাদের দাবি ছিল, মাওবাদী পলিটব্যুরো সদস্য তথা মিলিটারি কমিশনের প্রধান মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির নেতৃত্বেই পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় জুড়ে মাওবাদীরা ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করে। যার প্রেক্ষিতে অন্ধ্র ও ছত্তীসগঢ় সরকার আলাদা আলাদা ভাবে ঘোষণা করেছিল, কিষেণজিকে জীবিত পাকড়াও করতে পারলে কিংবা মারতে পারলে ১২ লক্ষ টাকা ‘পুরস্কার’ মিলবে। ওড়িশা সরকার ঘোষণা করে ৭ লক্ষের ইনাম।
অর্থাৎ জীবিত বা মৃত কিষেণজির ‘মাথার দাম’ ধার্য হয় সব মিলিয়ে ৩১ লক্ষ টাকা। গত ২৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে কিষেণজি নিহত হওয়ার পরে ন’মাস কেটে গেলেও যে অর্থ বাহিনীর হাতে এসে পৌঁছায়নি। যদিও কিষেণজির বিরুদ্ধে ওই অভিযানে কৃতিত্বের সুবাদে সিআরপি’র কোবরা (কম্যান্ডো ব্যাটেলিয়ন ফর রিসোলিউট অ্যাকশন) বাহিনীর দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমাডান্ট বিনোদ পি জোসেফ এবং নগেন্দ্র সিংহকে এ বছরের স্বাধীনতা দিবসে শৌর্যচক্রে ভূষিত করা হয়েছে।
কিন্তু আর্থিক পুরস্কার তো দেবে অন্ধ্র-ওড়িশা-ছত্তীসগঢ়! এখানে পশ্চিমবঙ্গের কী করার থাকতে পারে?
স্বরাষ্ট্র দফতর-সূত্রের ব্যাখ্যা: যে হেতু পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে, তাই অন্ধ্র-ছত্তীসগঢ়-ওড়িশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ইনামদানের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গের। এ ক্ষেত্রে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের ‘নোডাল এজেন্সি’র ভূমিকা নেওয়ার কথা। অথচ ‘কাজ মিটে যাওয়ার পরে’ অন্ধ্র-ছত্তীসগঢ়-ওড়িশা যেমন পুরস্কার নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না, তেমন এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে সমন্বয়সাধনে পশ্চিমবঙ্গেরও তরফেও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ এক সিআরপি-কর্তার।
আর তাই এ বার রাজ্যকে উদ্যোগী হতে আর্জি জানিয়েছেন সিআরপি-কর্তৃপক্ষ। আইজি বিবেক সহায়ের কথায়, “এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র দফতরই নোডাল এজেন্সি। তাই দফতরকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি, অন্যান্য রাজ্যের থেকে পুরস্কারের টাকা আদায় করতে ওঁরা যেন প্রয়াসী হন।” চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে পুরস্কার দেওয়া হবে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব।’’
এ দিকে ২৪ নভেম্বর বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সেই অভিযানে সিআরপি-র কোবরা ও সাধারণ ব্যাটেলিয়নের পাশাপাশি সামিল হয়েছিল রাজ্য পুলিশের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স (সিআইএফ)-ও। নিয়মমতো ইনামের অর্থ তাদেরও পাওয়ার কথা। টাকাটা ভাগাভাগি হবে কী ভাবে? সিআরপি’র এক কর্তা জানিয়েছেন, কোন বাহিনী কত পুরস্কার পাবে, ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই তা ঠিক করবে। “এ ব্যাপারে মহাকরণের কর্তারাই যা করার করবেন।” বলেন সিআইএফের এক অফিসারও। |