‘জাদু জুটি’র অভাব
‘তারকারা’ই ভরসা দুই ছাত্র পরিষদের
দু’পক্ষের হাতেই ‘ম্যাজিক জুটি’ নেই। অগত্যা দু’পক্ষেরই ভরসা ‘তারকা’ নেতৃত্ব।
সাতের দশকে ‘প্রিয়-সুব্রত’ জুটিই ছিল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের যে কোনও সমাবেশে ভিড় জমানোর জাদু কাঠি। বস্তুত, ’৭২ সালে কংগ্রেসের ফের মহাকরণে ফেরার অন্যতম কারিগর ছিলেন এই ‘জাদু জুটি’ই।
আজ দ্বিখণ্ডিত ছাত্র পরিষদের সামনে কোনও ‘জাদু জুটি’ নেই। প্রিয় মানে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এখন রোগশয্যায়। সুব্রত মানে সুব্রত মুখোপাধ্যায় এখন ছাত্র রাজনীতি থেকে বহু দূরে। তিনি এখন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। কিন্তু কী ছাত্র, কী যুব সংগঠনে গত দেড় দশকে নতুন কোনও ‘প্রিয়-সুব্রত’ জুটি তৈরি হয়নি।
সেই কারণে আজ, মঙ্গলবার ময়দানে মেয়ো রোড তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা সমাবেশে প্রধান বক্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মহাজাতি সদনে মূল ছাত্র পরিষদের (সিপি) সমাবেশে শ্রোতা টানতে উদ্যোক্তারা শরণাপন্ন হয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার। মমতা থেকে মানস সকলেই ছাত্র পরিষদের প্রাক্তনী। তাঁরা তাঁদের পুরনো সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে ‘আমন্ত্রিত’ হয়ে যেতেই পারেন। অন্তত সুব্রতবাবু তা-ই মনে করেন। তাঁর কথায়, “প্রিয়দার নেতৃত্বে আমরা মহাজাতি সদনে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করতাম। সেই সময়ে আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্যামল ভট্টাচার্যকে যেমন আমন্ত্রণ জানাতাম, তেমনই কয়েকবার প্রফুল্লদার (সেন) মতো ওজনদার নেতাদেরও নিয়ে এসেছি।” কিন্তু সুব্রতবাবু স্বীকার করেছেন, “প্রিয়দার উপস্থিতি তখন ছাত্র-যুবদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত।”অবশ্য তাঁদের জমানায় সিপি ‘স্বাধীন’ভাবে সংগঠনের কাজ ও আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিত বলে জানান প্রদীপবাবু। প্রিয়বাবু সংগঠনের রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন প্রদীপবাবু টানা ছ’সাত বছর সহ-সভাপতি ছিলেন। সে সময়ের কথা জানিয়ে সোমবার প্রদীপবাবু বলেন, “সংগঠন পরিচালনার পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত মৌলিকভাবে আমরাই নিতাম। অর্থও নিজেরাই সংগ্রহ করতাম। প্রদেশ নেতৃত্বের মুখাপেক্ষী কখনওই ছিলাম না।” তিনি জানান, সেইসময়ে সিপি নেতারাই সহকর্মীদের আন্দোলনের দিশা দেখাতেন। কিন্তু সেই ছবিটা এখন বদলে গিয়েছে বলে জানান প্রদীপবাবু।
দলীয় রাজনীতি এখন ছাত্র সংগঠনে চেপে বসেছে। সেই কারণে প্রতিষ্ঠা দিবসের ২৪ ঘন্টা আগে উত্তর কলকাতার সিটি কলেজে টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “এখন সিপি বা টিএমসিপি-র আত্মবিশ্বাস কম। দু’তরফই দলের মূল নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল। সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে ছাত্রদের সরাসরি সংযোগ না থাকায় এই শূণ্যতা তৈরি হয়েছে।”
তৃণমূলের যুব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও প্রাক্তন ছাত্র নেতা সৌরভ চক্রবর্তী মনে করেন, “কেবল রাজ্যেই নয়, সারা দেশেই মমতাদি এখন আকর্ষণীয় নেতৃত্ব। ছাত্র-যুব থেকে সাধরণ মানুষ-সকলেই তাঁর বক্তব্যই শুনতে চান।’’ তবে সৌরভ জানান, আজ মেয়ো রোডে টিএমসিপি-র সমাবেশে সুব্রতবাবু, অশোক দেব, তাপস রায়ের মতো প্রাক্তন ছাত্র নেতারাও বক্তা। তাঁর কথায়, “এটাই আমাদের সংগঠনের ট্রাডিশন। প্রবীণদের বক্তব্য এই প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।”
একই বক্তব্য সিপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল রায়েরও। তিনি বলেন, “প্রদেশ নেতৃত্বের উপর নির্ভরতার এই ধারাটা দীর্ঘদিন আগেই তৈরি হয়েছে। ছাত্রদের বদলে নেতারাই নেতৃত্বের পুরোভাগে রয়ে গিয়েছেন। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে চেষ্টা হচ্ছে ছাত্রদের মধ্য থেকে নেতা তুলে আনার।”
এখন দেখার কতদিনে নতুন নেতার সন্ধান পান দুই পরিষদের ছাত্ররা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.