কলকাতা পুলিশের আত্মঘাতী সাব-ইনস্পেক্টর কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই উদ্যোগী হয়েছিলেন। তারই অঙ্গ হিসেবে মৃত অফিসারের মেয়ে মৌসুমীকে করণিকের চাকরি দিল রাজ্য সরকার। কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে তাঁকে ‘লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক’-এর পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা নিজেই সোমবার কার্তিকবাবুর বাড়ি গিয়ে তাঁর মেয়ের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
মৌসুমী চাকরি পাওয়ায় কার্তিকবাবুর সহকর্মীদের একাংশ খুশি হলেও রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের অনেকের বক্তব্য অন্য রকম। তাঁরা জানান, ২০০৫ সালের আগে যে-সব পুলিশকর্মী মারা গিয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়-পরিজন মানবিকতার খাতিরে চাকরি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই এখনও চাকরি পাননি। রাজ্য সরকার তাঁদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ও তাঁরা জানেন না। পুলিশি সূত্রের খবর, শুধু রাজ্য পুলিশেই এই ধরনের চাকরির আবেদন করেছেন ৩৫০ জন। আর কলকাতা পুলিশে এই আবেদনের সংখ্যা ১৯০-এরও বেশি।
পার্ক স্ট্রিট থানায় কর্মরত এসআই কার্তিকবাবুর দেহ শনিবার ভোরে বাগুইআটি-জ্যাংড়ায় বিদ্যাসাগর পল্লির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অনুমান, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। কার্তিকবাবু তাঁর মৃত্যুর জন্য ‘সুইসাইড নোট’-এ কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে দায়ী করে গিয়েছেন। ওই পুলিশকর্তাকে ইতিমধ্যে ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তবে কলকাতা পুলিশ নিজে থেকে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করে কোনও তদন্ত করবে কি না, সিপি সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি।
বিদ্যাসাগর পল্লিতে একটি বাড়ির তেতলার ফ্ল্যাটে থাকে কার্তিকবাবুর পরিবার। তেতলায় মুখোমুখি দু’টি ফ্ল্যাট। একটি কার্তিকবাবুর। অন্যটি তাঁর এক ভাইয়ের। ভাই মারা যাওয়ায় সেই ফ্ল্যাটটিও কার্তিকবাবুরা ব্যবহার করতেন। ওই এসআই-কে শনিবার ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁর ভাইয়ের ফ্ল্যাটেই। পুলিশ কমিশনার এ দিন বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ কার্তিকবাবুদের বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই ওই ফ্ল্যাটে যান। কথা বলেন মৃতের স্ত্রী রুমাদেবী, তাঁর দুই মেয়ে মৌসুমী ও শর্মিষ্ঠা, কার্তিকবাবুর শ্বশুর এবং অন্য এক ভাই সুভাষ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
পরে পুলিশ কমিশনার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীই আমাকে কার্তিকবাবুর বাড়িতে পাঠান। কার্তিকবাবুর এক মেয়েকে পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, পুলিশ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বা পুলিশ কল্যাণ সমিতির তরফ থেকেও মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। |