রাস্তার পাশেই সার দিয়ে পড়ে আছে নিথর দেহগুলি। পথচলতি সকলেই থমকে দাঁড়ালেন এক মুহূর্ত। দৃশ্যটা এত দিনে কার্যত তাঁদের প্রায় গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে আজ, সংখ্যাটা বড্ড বেশি। একটা-দুটো নয়, সব মিলিয়ে মোট সতেরোটি মৃতদেহ। আর নিখুঁত হাতে এঁদের প্রত্যেকের গলা কাটা হয়েছে একই কায়দায়।
আজ সকালে আফগানিস্তানে পাওয়া গিয়েছে এ রকমই সতেরোটি রক্তাক্ত দেহ।
দক্ষিণ হেলমন্দের মুসা কোয়ালা জেলার কিছু বাসিন্দা গত রাতে আয়োজন করেছিলেন এক পার্টির। ১৫ জন পুরুষের সঙ্গে সেখানে ছিলেন দুই মহিলাও। গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে নাচ-গান।
কিন্তু তালিবান অধ্যুষিত এই অঞ্চলে আত্মীয় ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে মেয়েদের মেলামেশা বন্ধ দীর্ঘদিনই। এত দিন পর সেই নির্দেশই কি না অগ্রাহ্য করলেন বাসিন্দারা! সমাজের এতটা ‘অধঃপতন’ আর সহ্য করতে পারেনি নেতারা। রাত্তিরেই ওই বাড়িতে ঢুকে এক এক করে সতেরো জনের গলা কেটে খুন করেছে তারা। অনেকের দেহে রয়েছে মারধরের চিহ্ন। গলা কাটার আগে কয়েক জনকে আবার গুলিও করা হয়েছে। আর তার পর দেহগুলি টেনে হিঁচড়ে এনে ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে। ‘খারাপ’ কাজের ‘উচিত’ শাস্তি সকলকে দেখানোর জন্য।
হেলমন্দ প্রদেশের প্রশাসনের এক মুখপাত্র দাউদ আহমদি আজ এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, এর নৃশংসতাতেই প্রমাণ হয় এটা তালিবানের কাজ। পুলিশের এক বাহিনী ওই এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। গোটা ঘটনাটি তারা তদন্ত করে দেখবে।
দক্ষিণ আফগানিস্তানের এই অঞ্চলে বরাবরই সক্রিয় তালিবান। কিছু ধর্মীয় সঙ্গীত ছাড়া যে কোনও রকম গানই নিষিদ্ধ তালিবান অনুশাসনে। বারণ ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে মেলামেশাও। এমনকী স্বামী বা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মহিলাদের একা রাস্তায় বেরোনোর উপরও রয়েছে কড়া চোখরাঙানি।
গত জুনে, এক হোটেলে রাত-বিরেতে পার্টি চলায় এ দিনের মতো একই রকম ভাবে হামলা চালিয়েছিল এক দল বন্দুকবাজ তালিবান। সেই ঘটনায় প্রাণ হারান কুড়ি জন। গলা কেটে খুনও করা হয়ে থাকে হামেশাই। রমজানের মধ্যেও মুসা কোয়ালায় সরকারের চর সন্দেহে গলা কেটে মেরে ফেলা হয়েছে তিন জনকে। |