প্রশ্ন নজরদারি নিয়েই
নাকে নল, আরজিকরের রোগীর মৃত্যু ট্রামলাইনে
ট্রামলাইনের উপরে পড়ে আছেন এক যুবক। নাকে কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানোর নল গোঁজা। দেহে প্রাণ নেই। তাঁকে ঘিরে কয়েক জন কৌতূহলী মানুষ।
রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে আর জি কর হাসপাতালের সামনে। পরে পুলিশ জানায়, ওই যুবকের নাম খোকন পাল (৩০)। বাড়ি জগদ্দলের মাদ্রাল নিউ টাউনে। তিনি আর জি করেই পুরুষদের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। পুলিশ জেনেছে, জগদ্দলের বাসিন্দা, ‘প্যানক্রিয়াটাইটিস’ (অগ্ন্যাশয়ের অসুখ)-এর খোকনবাবু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গত শুক্রবার। আজ, সোমবার দেহের ময়না-তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কী ভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন উঠেছেই। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী নাকে নল লাগানো অবস্থায়
খোকন পাল
ডাক্তার-নার্স-আয়া-রক্ষীদের চোখের সামনে দিয়ে ট্রামলাইনে পৌঁছলেন কী ভাবে? সুস্পষ্ট জবাব মেলেনি। তবে সরকারি হাসপাতালে নজরদারির হাল কী, এই ঘটনায় তা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে।
কী হয়েছিল ওই যুবকের? বছরখানেক আগে বিয়ে হয় খোকনবাবুর। স্ত্রী শ্যামলী ছাড়াও মা, দুই দাদা এবং একটি ছোট ভাই আছেন। তাঁর মা তুলসীরানি পাল জানান, খোকনবাবু বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা, নানা ধরনের মাটির পুতুল বানাতেন। ‘অফ-সিজন’ অর্থাৎ যখন মূর্তির বরাত থাকত না, তখন ঠিকা শ্রমিকের কাজও করতেন। গত ১৬ অগস্ট তিনি পেটে যন্ত্রণা নিয়ে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। কিন্তু নীলরতন তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। ফের ভাটপাড়ার হাসপাতালে সেখান থেকে গত শুক্রবার তাঁকে পাঠানো হয় আর জি করে।
ওই যুবকের স্ত্রী শ্যামলীদেবী জানান, তাঁর স্বামীর পেটে দীর্ঘদিন ধরে আলসারের সমস্যা ছিল। কয়েক মাস আগে বারাসতের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে ছাড়া পেয়েও সুস্থ হননি। শ্যামলীদেবীর অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীর উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি।
আর জি কর হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগী খোকনবাবু খাবার গিলতে পারছিলেন না। তাঁর নাকে ‘রাইলস টিউব’ (কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানোর নল) পরানো ছিল। সেই অবস্থাতেই তিনি ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে যান। ওয়ার্ডে তাঁর সঙ্গে বাড়ির লোকও ছিলেন। কিন্তু দুপুরে বাড়ির লোক খাওয়ার জন্য ওয়ার্ড ছেড়ে বেরোনোর পরেই এই ঘটনা ঘটে বলে ডেপুটি সুপারের দাবি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত শুক্রবার ওই রোগী খুব আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর দীর্ঘ চিকিৎসা দরকার বলে চিকিৎসকেরা তখনই খোকনবাবুর বাড়ির লোকেদের জানিয়েছিলেন।
এমন এক জন রোগী রাইলস টিউব পরানো অবস্থায় সকলের চোখের সামনে দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোলেন কী ভাবে? সিদ্ধার্থবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, মুখে কাপড় চাপা দিয়ে কেউ যদি বেরিয়ে যান, ভিড়ে ঠাসা হাসপাতালে সেটা কে-ই বা নজর করবেন? তিনি বলেন, “যে-ওয়ার্ডে ৪০ জন রোগীর থাকার কথা, সেখানে আছেন ৮০-৯০ জন। সেই তুলনায় কর্মী কম। তাই কে কখন ঢুকছেন বা বেরোচ্ছেন, অনেক সময়েই সেটা খেয়াল করা সম্ভব হয় না। আমরাও খানিকটা অসহায়।” একই সঙ্গে তিনি জানান, এ দিনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত হবে। সোমবার যুবকের ময়না-তদন্তের পরে বিষয়টি কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.