প্রোমোটারির ‘সিন্ডিকেট’-এর দাপটের পরে এ বার মাটির ব্যবসার ‘সিন্ডিকেট’-এর দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠল।
কলকাতার উপকণ্ঠে বিভিন্ন ‘উন্নয়নমূলক’ কাজের জন্য মাটি সরবরাহকারী চক্রের চাঁইদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিগৃহীত হয়েছেন এক মহিলা। রবিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরের পশ্চিম সাতুলিয়ায় ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধর করে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের ‘অনুগামীদের’ নাম জড়িয়ে গিয়েছে। মহিলাকে মারধর এবং তাঁর শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আরাবুল অবশ্য ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগের কথা অস্বীকার করেছেন। কিছু দিন আগে কাশীপুরেরই পোলেরহাট এলাকায় মাটির ব্যবসায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিবাদে আজিজুল বৈদ্য (৩৫) নামে এক যুবক খুন হন। সেই ঘটনার পিছনেও মাটির কারবারের ‘সিন্ডিকেট’ তথা আরাবুল-সঙ্গীদের নামে অভিযোগ উঠেছে।
এ দিন অভিযোগকারিণীর উপরে হামলা হল কেন?
ওই মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, গ্রামের কাঁচা রাস্তায় মাটি বোঝাই লরির চাপে শনিবার বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের পাইপ ভেঙে গিয়েছিল। তার প্রতিবাদ করেই মাটির ব্যবসার সিন্ডিকেটের চাঁইদের কোপে পড়েন তিনি। প্রথমে ওই চক্রের কয়েক জন তাঁকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও কানাকড়ি মেলেনি। তাই এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মাটি-ভর্তি লরির পথ আটকে দাঁড়ান ওই মহিলা। তাঁকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য লরিচালক শাসক দলের অনুগত স্থানীয় কয়েক জন যুবককে ডেকে আনেন। তারাই মহিলাকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রহৃত মহিলা পাঁচ জনের নামে কাশীপুর থানায় নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে সামাদ, বাহারুল ও মতিহার নামে আরাবুলের ‘ঘনিষ্ঠ’ তিন যুবক রয়েছে। ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম অবশ্য অভিযুক্তদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কোথায় কে কাকে মারধর করছে, আমি তা জানি না। কেউ অপকর্ম করলেই আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়! আমি এ-সব কিছুই জানি না।” কাশীপুর, ভাঙড়, রাজারহাট এলাকা-সহ কলকাতার কাছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় এখন মাটি বোঝাই লরির নিত্য আনাগোনা। প্রধানত নিচু জমি উঁচু করার জন্য মাটি নিয়ে আসে তারা। ওই মাটির বরাত নিয়ন্ত্রণ এবং তা সরবরাহের জন্যই রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। সেই সিন্ডিকেটেরই লরি মাটি বহন করছিল কাশীপুরের পশ্চিম সাতুলিয়ায়। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তৈরি করানো জলের পাইপটি মাটি বোঝাই লরির চাপে ভেঙে যাওয়ায় লরির চালক-খালাসির সঙ্গে বিবাদ বাধে মহিলার। তার উপরে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস সত্ত্বেও তাঁকে কিছুই দেওয়া হয়নি। মহিলা তাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিনিময়ে জোটে নিগ্রহ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও অভিযুক্তদের খোঁজ মেলেনি।” |