একই মাঠে সভা বুদ্ধদেবের, ফারাক ভিড়ের
খন তিনি মুখ্যমন্ত্রী। আজ তিনি প্রাক্তন।
তবু, ছবিটা বদলেছে। কিছুটা হলেও।
অন্তত আপাতদৃষ্টিতে সেই দৃশ্যই দেখা গেল রবিবার। প্রায় ১৫ মাস আগে বিধানসভা ভোটের আগে বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ ময়দানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন, তা ছিল কার্যত ফাঁকা। আর রবিবার ডিআইএফের ১৬ তম জেলা সম্মেলন উপলক্ষে বাঁকুড়া শহরে এসে প্রধান বক্তা হিসাবে বুদ্ধবাবু যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেই তামলিবাঁধ মাঠই তখন ভিড়ে ঠাসা। জমায়েত দেখে মঞ্চে উপস্থিত সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র দৃশ্যতই খুশি।
এক সিপিএম কর্মী বলছিলেন, “গত বছর আমরা খুব বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সে বার ২ মে বুদ্ধবাবুর মঞ্চে ওঠার সময় ছিল বিকেল চারটে। ৪টে ৫০ মিনিটে সভা সেরে তাঁর মেদিনীপুরে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল ৪টেতেও সভাস্থলে মেরেকেটে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক হাজির হয়েছিলেন। মাঠ কিছুটা ভরার পরে বুদ্ধবাবু সভাস্থলে ঢোকেন বিকেল ৫টায়।” বক্তৃতা শুরুর পরে অবশ্য মাঠে আরও লোক এসেছিল। কিন্তু, তা কোনও ভাবেই এ দিনের সভার ভিড়ের মতো নয়।
তামলিবাঁধ ময়দানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা। রবিবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
বস্তুত, এক সময়ের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বাঁকুড়ায় বিধানসভা ভোটে সিপিএম পর্যদুস্ত হওয়ার পরে এই প্রথম তারা কোনও বড় মাপের জনসভা করল। এই সময়ের মধ্যে একের পর এক স্কুল বা কলেজ বা সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে তারা হেরেছে। জয়পুর, কোতুলপুর, তালড্যাংরা, পাত্রসায়র, ইন্দাসের মতো ‘লাল দুর্গে’ থাবা বসিয়েছে ঘাসফুল। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএমের বহু নেতা-কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। একাধিক সিপিএম কর্মী নিহত হয়েছেন। বন্ধ অনেক পার্টি অফিস।
সব মিলিয়ে জেলায় ‘কোণঠাসা’ সিপিএমকে নিঃসন্দেহে কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছে এ দিনের সভার ভিড়। তামলিবাঁধ মাঠে এ দিন অবস্থা এমনই হয়েছিল যে, ময়দানে ঠাঁই না পেয়ে শহরের মাচানতলা মোড়ে মাইকের নীচে দাঁড়িয়েও বহু মানুষকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে হল। জেলা সম্পাদকের দাবি, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এসেছিলেন এ দিনের সভায়। যদিও জেলা পুলিশের হিসেবে ভিড় হয়েছিল ২৫ হাজারের কিছুটা বেশি। এই সংখ্যাটাও অবশ্য গতবারের তুলনায় অনেকটা বেশি।
গতবার কেন ভিড় কম হয়েছিল?
অমিয় পাত্রের ব্যাখ্যা, “সে বার বুদ্ধবাবু কেবল বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট প্রচারে এসেছিলেন। তাই সেই সভায় কেবলমাত্র ওই বিধানসভা কেন্দ্রের লোকজনেরাই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, এ বার গোটা জেলা থেকেই মানুষ এসেছেন।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “সরকারে আসার দেড় বছর পরে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা অনেকটাই খর্ব হয়েছে। মানুষ যে একটা ভুল দলকে ক্ষমতায় এনেছেন, তা বুঝতে পেরেছেন। এই ভিড়ই প্রমাণ করছে, মানুষ আমাদের পাশেই আছেন।”
সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ দিনের সভায় গোটা জেলা থেকে লোক আনতে প্রায় ৩০০টি বাস, বেশ কিছু ট্রাক ও ট্রেকার ভাড়া করা হয়েছিল। এত বাস তুলে নেওয়ার জন্য দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, খাতড়া, রাইপুরবিভিন্ন রুটের বহু যাত্রীদের বাস পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয় বাসস্ট্যান্ডগুলিতে।
তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কমছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য সরকারে তাদেরই জোটসঙ্গী কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ব্রজবাসী বিশ্বাস। তাঁর মন্তব্য, “তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কমছে, এ কথা মেনে নিচ্ছি। তবে সিপিএমের সভার ভিড় দেখে সিপিএমের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার বাইরে থেকে বহু মানুষকে নিয়ে এসে কৃত্রিম ভাবে এই ভিড় গড়েছে ওরা।” দলের জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে, এ কথা মানতে নারাজ বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ ।তিনি বলেন, “সিপিএমের সভায় কত লোক হয়েছিল, আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের দলের জনপ্রিয়তা কমছে, এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.