রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে এক হাত নিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
সমাজবিরোধীদের না-সামলে বিচারপতিদের ‘ধমকানো’ হচ্ছে নাম না-করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রবিবার এ ভাবেই ‘কটাক্ষ’ করেছেন বুদ্ধবাবু। ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিন বাঁকুড়ায় ভিড়ে-ঠাসা জনসভায় বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, “রাজ্যে ডাকাতির ঘটনা থেকে নারী নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে। এতে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। এখন সমাজবিরোধীরা মাথায় চড়ে বসেছে! আর উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বিচারপতিদের ধমকাচ্ছেন। অথচ সমাজবিরোধীদের সামলাতে পারছেন না!”
বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ মাঠে এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরে এটাই ছিল বাঁকুড়ায় সিপিএমের প্রথম বড় মাপের সমাবেশ। জেলা সিপিএমের একাধিক নেতাই ঘরোয়া আলাপচারিতায় মানছেন, গত বছর বিধানসভা ভোটের প্রচারে এই মাঠেই বুদ্ধবাবুর সভায় যা জমায়েত হয়েছিল, এ দিন ভিড় ছিল তার চেয়ে ঢের বেশি। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিল, আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসছে। আর তৃণমূলের প্রতি জনসমর্থন কমতে শুরু করেছে।” যা শুনে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁয়ের কটাক্ষ, “এ সব পাগলের প্রলাপ! |
বিধানসভা ভোটের পর থেকে জেলার স্কুল-কলেজ-সহ বিভিন্ন নির্বাচনে আমরা ধারাবাহিক ভাবে জিতে আসছি।”
বুদ্ধবাবু এ দিনের যুব সমাবেশে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থানের ‘করুণ’ চিত্রের কথা তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের আমলে যুবকদের কথা কেউ ভাবছে না। তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে না। বুদ্ধবাবু বলেন, “সরকারে থেকে বুঝেছিলাম, শুধু চাষ করে এগোতে পারব না। এগোতে গেলে কলকারখানা দরকার। কিন্তু এই সরকারের দেড় বছরে রাজ্যে একটাও নতুন কারখানা হয়নি। কারখানার জন্য সরকার জমি নেবে না। তা হলে কী হবে? কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, রাজ্য এখন পিছন দিকে হাঁটছে! রাজ্যে চাকরি নেই বলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে এ বার ছেলেমেয়েরা যাচ্ছেন না। বুদ্ধবাবুর দাবি, “বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে ৪০-৫০টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চালু করেছিল। এখন সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েত উঠে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের কোনও কাজ নেই। গরিবেরও তাই কাজ নেই।”
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সরকার দাবি করছে ৩ লক্ষ চাকরি হয়েছে। কোথাও চাকরি হয়নি। রেলেও হয়নি। যুবকদের বলছি, এই রাজ্য সরকার চাকরি দিতে পারবে না। শুধু উদ্বোধন করে যাচ্ছে! প্ররোচিত না-হয়ে সঠিক পথ আপনাদেরই বুঝে নিতে হবে।” সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্যের পরামর্শ, যুবকদের এখন প্রতিটি গ্রামে, পাড়ায় গিয়ে গরিব মানুষকে কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁর কথায়, “ওঁদের বলতে হবে আমরা ভুল করেছিলাম, দোষ করেছিলাম।” সভায় ছিলেন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী, অমিয়বাবু প্রমুখ। |