বসে আঁকো, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, নৃত্য ও আল্পনা প্রতিযোগিতা হয়ে গেল কাশীপুরে। রবিবার কলকাতার ভারত কলা কেন্দ্র ও স্থানীয় একটি নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দিনভর কাশীপুর স্বাগত হলে ও বোর্ড বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানগুলি হয়ছে। পরে দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের ভিত্তিতে একটি নৃত্যানুষ্ঠানও হয়।
|
নাচ, গান ও গীতিনাট্য হল পুঞ্চার লৌলাড়া রাধাচরন অ্যাকাডেমিতে। স্কুল প্রতিষ্ঠাতা হরিহর মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শুক্রবার এই অনুষ্ঠান হয়। তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয়। এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে ও বিশেষত নারী শিক্ষায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। ছিলেন পুঞ্চার বিডিও সুপ্রতীক সিংহ, লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা হরিহরবাবুর ছেলে চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
|
বিশিষ্ট ভাস্কর প্রয়াত সুনীল পালের স্মরণে একটি স্মরণসভা হল পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠে শনিবার। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রবৃন্দ এবং অধ্যক্ষ স্বামী আত্মপ্রভানন্দ। উল্লেখ্য, এই বিদ্যাপীঠের মূল তোরণ, মন্দির, স্বদেশবেদী, সভাগৃহ, দেবযান, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তি, মিউজিয়ামের সামনের তোরণ-সহ একাধিক শিল্পকর্ম গড়ে উঠেছিল এই শিল্পীর তত্বাবধানে।
স্মৃতিচারণা করেন বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষক দুর্গাশঙ্কর মল্লিক। তাঁর কথায়, সুনীলবাবু নিয়মিত বিদ্যাপীঠে এসে ওই শিল্পকর্মগুলি গড়ে তুলছেন। তাঁকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেন। অধ্যক্ষ আত্মপ্রভানন্দের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে, প্রয়াত এই ভাস্কর স্রেফ ভালোবাসার টানে কলকাতা থেকে বার বার কাজকর্ম দেখতে পুরুলিয়ায় ছুটে আসতেন। কলকাতায় গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি সপ্তাহান্তে বিদ্যাপীঠ গড়ে তুলতে কলকাতা থেকে পুরুলিয়ায় ছুটে এসেছেন। পারিশ্রমিক ছাড়াই তিনি কাজ করেছেন। বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন ছাত্র তথা সুনীলবাবুর নাতি নীলাঞ্জন পালও ‘আমার দাদু ও আমার বিদ্যাপীঠ’ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
|
‘আয়নার পাশে একটু অন্ধকার ছায়া এঁকে দাও’ শিল্পী ও কবি পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘মাধবীর জন্য’ নামাঙ্কিত কবিতার এই ইমেজারি আলোকচিত্র শিল্পীদের এক অন্য মাত্রারই ‘মূর্তি’ দিয়েছে। এমনিতেই আজকের দিনের শিল্পীদের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পমাধ্যম এই আলোক চিত্র। আর তাঁরা যদি হন রঘু রাই, রঘুবীর সিংহ, নিমাই ঘোষ বা প্রবুদ্ধ দাশগুপ্তদের মতো আলোকচিত্রী তাহলে তো কথাই নেই। সেই ছবি তখন কথা বলে দুরন্ত গতিতে। বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা বিনয় গুহ-কে বর্তমান প্রজন্মের মিডিয়া-প্রচার সর্বস্ব হয়তো চিনবে না; কিন্তু এই জেলার বহু পুরনো গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসকে যিনি তাঁর আলোকচিত্রে ‘বন্দি’ করে রেখেছেন তাঁর গুরুত্বকে অস্বীকার করা এত সহজ নয়। সিউড়ির এক প্রবীণ স্টুডিও ফোটোগ্রাফার বিশু নন্দনের কথায়, “বিনয়দার তোলা ছবি শিল্প ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।” বিনয়বাবুর বয়স এখন ৮০। সেই সুদূর ১৯৪৭ সাল থেকে আলোকচিত্রকে শিল্পের মাত্রায় ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেই সময়ের প্রাচীন সব দুর্মূল্য সব ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে চালিয়েছেন নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা। যেমন, বিনয়বাবু আউট ডোর ছবি তোলার ক্ষেত্রে পেছনে (ব্যকগ্রাউন্ড) ব্যবহার করতেন হলুদ কাপড়। ওই কাপড় টাঙিয়ে সাদা-কালো ছবিকে তিনি অন্য ভাবে জীবন্ত করে তুলেতেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছেন। ছুটেছেন গঙ্গাসাগর মেলায়। বহু বছর আগের ওই সব মেলায় তাঁর তোলা নাগা সন্যাসীদের ছবি অবশ্য এখন দুর্লভ। বিনয়বাবু জেলার বহু মন্দির বা প্রাকৃতিক দৃশ্য তোলার পাশাপাশি প্রচুর পোর্ট্রেটও তুলেছেন। কালের যাত্রায় অনেক ছবিই হারিয়ে গিয়েছে। সিউড়ি-সহ জেলার নানা এলাকায় বিনয়বাবুর তোলা ওই সব পোর্ট্রেট ও অন্যান্য ছবি আজও বহু বনেদী বাড়িতে টাঙানো আছে।
বৃদ্ধ বয়সে নিজের ব্যবহৃত আজকের দিনে দুষ্প্রাপ্য সব প্রাচীন ক্যামেরা দেখাতে দেখাতে বিনয়বাবু এক মজার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এক বার বিধানচন্দ্র রায় তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী গোপিকাবিলাস সেনের কোটাসুরের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানে ছবি তোলার সুযোগ হয়েছিল বিনয়বাবুর। মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মানুষের একসঙ্গে শালপাতার ঠোঙায় মুড়ি খাওয়ার ছবি তুলেছিলেন তিনি। পরে সেই ছবি দেখে মুগ্ধ বিধানবাবু পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন তাঁর। বিনয়বাবু জানালেন, তারপর থেকে মুখ্যমন্ত্রী যখনই বীরভূমে আসতেন তখনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ থাকতো বিনয়বাবু যেন ওই অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে আসেন!
|
‘যে ভাবে নদীকে খর সমুদ্র টানে,
ঘুঙুরে ঝঞ্ঝা উদাত্ত গানে গানে।’
কবি অমিতাভ দাশগুপ্তের এই কবিতার মতোই বেঁচে আছেন প্রয়াত শিল্পী কিশোরকুমার। তাঁর স্মরণে সিউড়ির কয়েকজন কিশোরকুমারপ্রেমী শিল্পী গড়ে তুলেছেন ‘লুকোচুরি’ নামে একটি সঙ্গীত সংস্থা। ওই সংস্থা বিগত ছয় বছর ধরে কিশোরকুমারের স্মরণে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। গত ২৩ অগস্ট স্থানীয় রবীন্দ্রসদন মঞ্চে এ বারের কিশোর-স্মরণ অনুষ্ঠানে ১১ জন সঙ্গীতশিল্পী কিশোরকুমারের গাওয়া হিন্দি ও বাংলা গান পরিবেশন করেছেন।
|
এলাকার মানুষের কথায়, তিনি মুরারইয়ের সাংস্কৃতিক মুখ। বিভিন্ন মনীষির জন্মদিন-প্রয়াণ দিবস পালন হোক বা গুণীজন সংবর্ধনা কিংবা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই তিনি জড়িয়ে আছেন। তিনি সুনীলসাগর দত্ত। সাতের দশক থেকে প্রকাশ করে চলেছেন লিটল ম্যাগাজিন ‘বীরভূমের প্রান্তিক’। ত্রৈমাসিক আকারে ওই পত্রিকা বহু বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে এর প্রকাশ খানিকটা অনিয়মিত ভাবে। বছরে একটি বা দু’টি। আটের দশকে সুনীলবাবুর নেতৃত্বে মুরারাইয়ে প্রতি মাসে কোনও এক রবিবার বসতো বৈকালিকের সাহিত্য আড্ডা। ওই আড্ডায় বীরভূম ছাড়াও অন্য জেলার সাহিত্যপ্রেমীরা তাঁদের লেখা পড়ে শোনাতেন। আড্ডায় পড়া সেই সব নির্বাচিত লেখা পরের আড্ডায় ছাপার অক্ষরে পেতেন সাহিত্যপ্রেমীরা। তাঁর উদ্যোগে গত এক বছর ধরে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিটি পঞ্চায়েতে পালিত হল রবীন্দ্র জন্মোৎসব।
|
তথ্য: অরুণ মুখোপাধ্যায়।
ছবি: নিজস্ব চিত্র, সব্যসাচী ইসলাম ও অনির্বাণ সেন। |