ফের জ্বলছে কেশপুর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে গুলিবিদ্ধ ছাত্র
বোমা-গুলির ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে কেশপুরে।
সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষে এক সময় জেরবার হয়ে গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা। এখন শুরু হয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ। পরিস্থিতি এমনই যে, রবিবার গ্রামে গুলিও চলে। তাতে আহত হয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্র শেখ আব্দুল হানিফ। সে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি সুনীল চৌধুরী বলেন, “গোলমাল হয়েছিল। ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।”
বেশ কিছু দিন ধরেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে কেশপুর উত্তপ্ত ছিল। গত বুধবার আশিস প্রামাণিককে সরিয়ে শেখ মহিউদ্দিনকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি করার পরই কেশপুরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। তারই জেরে এ দিন দামোদরচকে গুলি চলে বলে অভিযোগ। শেখ মহিউদ্দিন বলেন, “আশিস গোষ্ঠীর লোকজন দামোদরচকে এ দিন গুলি ছোড়ে।” আশিসবাবুর আগে ব্লক সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন চিত্ত গড়াই। তাঁরও অভিযোগ, “আশিসবাবু ব্লক সভাপতি থাকাকালীন সিপিএমের কিছু দুষ্কৃতীকে দলে ঢুকিয়েছেন। তারাই অশান্তি ছড়াচ্ছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সিপিএমের কিছু লোক তৃণমূলে ঢুকে গোলমাল পাকাচ্ছে।” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলইয়ের বক্তব্য, “গোটাটাই তৃণমূলের নিজেদের গোলমাল।”
আহত আব্দুল হানিফ।
এ দিন সকালে গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল হানিফ। গুলির আওয়াজে পালানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু একটি গুলি তার পিঠে লাগে। হাসপাতালে শুয়ে হানিফ বলে, “সবাই ছোটাছুটি করছিল। কী হয়েছে দেখতে যাই। হঠাৎ পিঠে আঘাত লাগে। ছিটকে পড়ি।” হানিফের বাবা শেখ মুজফ্ফর বলেন, “সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ কিছু লোক গুলি চালাতে শুরু করে। যারা গুলি চালাচ্ছিল তারা আশিসবাবুর লোক।” ধৃত ৬ জনও আশিস-গোষ্ঠীর লোক বলেই খবর।
দামোদরচকে গুলি কেন? নানা অপরাধে অভিযুক্ত আশিস-ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে খুঁজতে শনিবার সকালে গ্রামে এসেছিল পুলিশ। গ্রামের কয়েক জন তাদের বাড়ি দেখিয়ে দেয়। অভিযুক্তদের না পেয়ে চলে যায় পুলিশ। তার পরই গ্রামে বোমাবাজি হয়। দু’জন জখমও হন। অভিযোগ, অভিযুক্তদের বাড়ি চিনিয়ে দেওয়ার ‘অপরাধের শিক্ষা’ দিতেই এ দিন গুলি চালানো হয়। যদিও আশিসবাবু বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।”
এই কেশপুর ঘিরে এক সময় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। নব্বই দশকের শেষে সিপিএম-তৃণমূলের রোজকার এলাকা দখলের লড়াই দেখেছেন কেশপুরবাসীরা। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে দেড় বছর। কেশপুরে এখন লড়াই বেধেছে তৃণমূলেরই একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে। পরিবর্তনের পরই চিত্ত গড়াইকে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয় আশিসবাবুকে। শুরু হয় চিত্ত-গোষ্ঠী ও
আশিস অনুগামীদের কোন্দল। পরিস্থিতিতে ‘রাশ’ টানতে ফের ব্লক সভাপতি বদল করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু শেখ মহিউদ্দিনকে সভাপতি করতেই শুরু হয় প্রতিবাদ। নতুন একটি গোষ্ঠী সামনে আসে। দীর্ঘ দিন এলাকাছাড়া থাকার পরে কেশপুরে ফেরা পুরনো তৃণমূল কর্মী নেপাল ঘোষের নেতৃত্বে একদল কর্মী-সমর্থক সম্প্রতি মেদিনীপুরে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। দাবি ওঠে, সকলের মত নিয়ে ব্লক সভাপতি বাছতে হবে। উপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপানো চলবে না।
কেশপুরের মানুষ কিন্তু রোজকার এই অশান্তি থেকে মুক্তি চান। শেখ মুজফফরের কথায়, “আমরা খেটে খাই। অশান্তি চাই না।” ব্লক সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কেশপুরের মানুষকে করজোড়ে আবেদন জানাচ্ছি। পুলিশকেও বলেছি নিরপেক্ষ ও কঠোর ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করে কেশপুরকে বদনাম থেকে মুক্তি দিন।” চিত্তবাবুও বলছেন, “কেশপুরে শান্তি স্থাপনে হাতে হাত মিলিয়ে চলতে চাই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.