সরকার-বিরোধীদের দমন করার নামে বাসার আল আসাদ বাহিনীর আরও একটি ‘নৃশংস গণহত্যার’ সাক্ষী থাকল রাজধানী দামাস্কাসের লাগোয়া শহর দারায়া। সরকার-বিরোধীদের অভিযোগ, দারায়া থেকে গত দু’ দিনে প্রায় ৩২০টি মৃতদেহের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু শিশুর দেহও। এই মর্মে বিদ্রোহীদের তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে সার দিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। এ ছাড়া, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে, নিহতদের দেহের স্তূপে মিশে আছে বেশ কিছু শিশুর নিথর দেহ।
গত কয়েক দিন ধরেই সিরিয়ার সেনার সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বিদ্রোহীদের। দিন যত গড়িয়েছে তীব্র হয়েছে সেনার অত্যাচার। সরকার-বিরোধীদের তরফে সম্প্রতি প্রকাশ করা ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, দারায়ার একটি মসজিদ-চত্বরে পড়ে রয়েছে মৃতদেহে স্তূপ। ওই ভিডিওটি তোলার কিছু ক্ষণ আগেই ‘বিরোধী-দমন অভিযান’ চালিয়েছে বাসার আল আসাদের বাহিনী। সিরিয়ার একটি মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে, কেবল শনি ও রবিবারে দামাস্কাস লাগোয়া শহরের ওই মসজিদ চত্বর থেকেই উদ্ধার হয়েছে প্রায় তিনশো কুড়িটি মৃতদেহ। যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু শিশুর দেহও। |
সিরিয়ার মানবাধিকার সংগঠনের তরফে একে ‘গণহত্যা’ হিসেবেই বর্ণনা করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আসাদ বাহিনী ‘গণহত্যার যন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে। যার রোষ থেকে নিস্তার পাচ্ছে না নিরপরাধ শিশুও।
সরাকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অবশ্য বলা হয়েছে, দারায়াকে ‘জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত’ করেছে সেনা। সরকারি কাগজে লেখা হয়েছে, সেই এক বয়ান, “সন্ত্রাসবাদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে দারায়া। সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিলেন। সেনা তাদের হাত থেকে শহরকে মুক্ত করেছে।” বিক্ষুব্ধদের তরফে প্রকাশ করা ভিডিওটির শেষ দিকে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি গণ কবরে নিরস্ত্র মানুষের মৃতদেহ ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে জওয়ানেরা।
গত বছর মার্চ মাস থেকে সিরিয়ার শাসক বাসার আল আসাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সরকার বিরোধীরা। আর নানা সময়েই বিদ্রোহীদের উপর নেমে এসেছে সরকারি নির্যাতন। সেনার গুলি-বোমায় ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। সিরিয়ার ওই মানবাধিকার সংগঠনটি জানাচ্ছে তাদের হিসাব অনুযায়ী শুধু শনিবারেই সারা দেশে নিহত হয়েছেন ১৮৩ জন। গত বছর মার্চ থেকে এ বছরের অগস্ট। প্রায় দেড় বছর কেটে গেলেও ছেদ পড়েনি হিংসায়।
এরই মধ্যে, সিরিয়ার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন জাপানের এক সাংবাদিক মিকা ইয়ামামাতো। সিরিয়ার আলেপ্পোতে খবরের খোঁজে গিয়ে সোমবার সেনার গুলিতে জখম হন তিনি। তাঁর দেহে ৯টি গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। গত বছর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ার সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৪ জন বিদেশি সাংবাদিক। |