প্রহরীবিহীন লেভেলক্রসিং পার হতে গিয়ে রেললাইনে বেকায়দায় চাকা ফেঁসেছিল গাড়ির। চেষ্টা করেও সেটিকে নড়ানো যাচ্ছিল না। ততক্ষণে সেখানে এসে পড়েছে আলুয়াবাড়িগামী ডিএমইউ প্যাসেঞ্জার। ট্রেনটি গাড়িতে ধাক্কা মারায় এক দম্পতি-সহ ৪ জন মারা গেলেন। শনিবার বিকেলে শিলিগুড়ির বাগডোগরা থানার গোঁসাইপুর এলাকায় এনজেপি-আলুয়াবাড়ি লাইনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। জখম এক বালিকাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিলিগুড়ি শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, “ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাটি কী ভাবে হল, বিশদে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রণজিৎ ধর ওরফে গৌতম (৫৪), তাঁর স্ত্রী মলি ধর (৪৫), ওই দম্পতির পরিচিত মিতারানি ঘোষ (৩৭) এবং দেবশ্রী পাল (৩৫)। পেশায় ঠিকাদার রণজিৎবাবুই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। মৃত এবং জখম, সকলেই হাকিমপাড়ার বাসিন্দা। আহত বালিকা মিতারানিদেবীর পাঁচ বছরের মেয়ে। |
গোঁসাইপুরে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়া গাড়ি। ছবি: কার্তিক দাস |
এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ বেংডুবি এলাকায় একটি নিমন্ত্রণবাড়ি থেকে ফিরছিলেন রণজিৎবাবুরা। পথে গাড়িটি লেভেলক্রসিংয়ে আটকে যায়। রেল সূত্রের দাবি, লাইনের উপরে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে ট্রেনের চালক হর্ন দেন। ব্রেক কষেন। কিন্তু চালক রণজিৎবাবু এবং অন্যরা নামার আগেই ইঞ্জিনের ধাক্কায় গাড়িটি প্রায় ১০০ মিটার দূরে ছিটকে যায়।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এনজেপি-র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। দুর্ঘটনার জেরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচলে কিছুক্ষণ বিঘ্ন ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা ওখানে রেলগেটের দাবি করেছেন। কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়েছে।”
দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই হাকিমপাড়ায় শোকের ছায়া নামে। শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল এলাকায় যান। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের ক্ষোভ, “প্রহরীবিহীন লেভেলক্রসিংয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু বার রেলকে বলা হয়েছে। রেল নানা জায়গায় বহু টাকা খরচ করছে। অথচ, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে রেলগেট বসাতে উদ্যোগী হচ্ছে না।” শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “রণজিৎবাবু এবং মলিদেবীর একমাত্র ছেলে পড়াশুনোর সুবাদে বাইরে। এই মুহূর্তে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। জখম বাচ্চাটার চিকিৎসায় যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে তা দেখতে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” |