টিউশন নিতে যাচ্ছিল বছর পনেরোর কিশোরী। মাঝ পথে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় জনা কয়েক যুবক। রাতভর তার উপর ‘অত্যাচার’ চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি দুষ্কৃতীরা, শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে ফেলে রেখে যায় নির্জন এক কৃষি খামারে।
সুজিতা মণ্ডল নামে মালদহের মথুরাপুরের ওই ছাত্রীর বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী দীনেশবাবু মানিকচক থানায়, তাঁর
|
সুজিতা মণ্ডল |
মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানালেও এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। প্রাথমিক পরীক্ষায় গণধর্ষণের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশও। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “অপরাধীদের খোঁজে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।” তবে সন্ধে পর্যন্ত ধরা পড়েনি কেউই।
ঘটনাচক্রে রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ওই এলাকার বিধায়ক। নিজের এলাকায় এমন ঘটনায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে তিনি। এ দিন সকালেই মানিকচক থানায় যান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি হতভম্ব। আমার বিধানসভা এলাকায় এর
আগে এমন ঘটনা আগে কোনও দিন ঘটেনি। এলাকার মহিলারা সন্ত্রস্ত। পুলিশকে বলেছি স্কুল চলাকালীন যেন মোবাইল ভ্যান এলাকায় টহল দেয়।” এ দিনই জলপাইগুড়িতে মহিলা কংগ্রেসের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি
প্রদীপ ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে সর্বদল বৈঠকের আর্জি জানান। জেলার মন্ত্রী, কংগ্রেস নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের ক্ষোভ, “পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে মালদহের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার ঘুমোচ্ছেন।” |
মথুরাপুরের বোচাহি গ্রামের সুজিতা স্থানীয় তিলক সুন্দরী বালিকা
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ চৌধুরীপাড়ায় ইংরেজি টিউশন নিতে বেরিয়েছিল ওই ছাত্রী। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হলেও সে আর বাড়ি ফেরেনি। যেখানে তার টিউশন পড়তে যাওয়ার কথা ছিল সেই ইংরাজির শিক্ষকও জানান, ওই দিন দুপুরে সুজিতা পড়তেই আসেনি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, টিউশন পড়তে যাওয়ার পথেই দুষ্কৃতীরা ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায় কোনও নির্জন এলাকায়। গণধর্ষণের পরে রাতে সেখানেই তাকে খুন করে দেহটি একটি গাছতলায় ফেলে রেখে পালায় তারা।
সুজিতার মা সীতাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে বলেছিল টিউশন নিয়ে এক বান্ধবীর বাড়িতে গান শুনতে যাবে। দেরি দেখে আমরা ভেবেছিলাম গান শুনতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। কিন্তু রাত বাড়ে। মেয়ে ফিরছে না দেখে সেই বন্ধুর বাড়িতে বার বার ফোন করার চেষ্টা করি। কিন্তু লাইন পাইনি। সকালে যোগাযোগ করে জানতে পারি মেয়ে সেখানেও যায়নি।” বাড়ির লোকজন যখন হন্যে হয়ে সুজিতার খোঁজ করছেন তখনই পড়শি এক মহিলা খবর দেন, বাড়ির অদূরে ওই কৃষি খামারে পড়ে রয়েছে সুজিতার দেহ।
ওই ছাত্রীর দিদি রূপালি বলেন, “কয়েকদিন ধরেই বোন বলছিল, একটি ছেলে তাকে উত্যক্ত করছে। দিন কয়েক আগে ছেলেটা ভাইকেও শাসিয়েছিল, ‘তোর দিদি আমার সঙ্গে কথা না-বললে খুন করব।’ আমার সন্দেহ, ওই যুবকই সাঙ্গোপাঙ্গ জুটিয়ে এ কাজ করেছে।” |