গ্রামের হোটেলে ভাত খাওয়ার সময়ে গুলি করে, কুপিয়ে খুন করা হল কুলতলির এক সিপিএম নেতাকে। শনিবার দুপুরে কুলতলির পাঁচুয়াখালি বাজারের ঘটনা। নিহতের নাম ইশা গায়েন (৪২)। বাড়ি মহিষমারি গ্রামে। তিনি সিপিএমের কুলতলি লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুন হন ওই নেতা।
পুলিশ জানায়, নিহতের বিরুদ্ধে গত বছর জয়নগর থানা এলাকায় এক এসইউসি কর্মীকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনার সঙ্গে ইশাবাবুর খুন হওয়ার ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আলোচনা করে আততায়ীদের শনাক্ত করা গিয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা যাবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিজমা নিয়ে গ্রাম্য নানা বিবাদের মীমাংসার জন্য কুলতলি থানার উদ্যোগে এ দিন দুপুরে সিপিএম পরিচালিত কুণ্ডখালি-গোদাবরী পঞ্চায়েতে সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। জনা ২০ গ্রামবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইশাবাবুও। ছিলেন ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধিও। দুপুর ১২টা নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টা খানেক পরে, বৈঠকের মাঝে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় কাছেই পাঁচুয়াখালি বাজারের ওই হোটেলে। ওই সিপিএম নেতা যখন খাচ্ছিলেন, সেই সময়ে দু’টি মোটরবাইকে জনাছয়েক দুষ্কৃতী এসে হাজির হয়। দুই দুষ্কৃতী হোটেলে ঢুকে ইশাবাবুকে লক্ষ করে পর পর চারটি গুলি চালায়। পাশে বসে থাকা ভরত নস্কর নামে এক গ্রামবাসীর বুকে লুটিয়ে পড়ে ইশাবাবু। সেই সময়ে দুষ্কৃতীরা ভোজালি দিয়ে তাঁর পিঠে কোপ মেরে মোটরবাইকে উঠে চম্পট দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই সিপিএম নেতার।
আচমকা এই হামলায় হোটেলে খেতে আসা লোকজন পালিয়ে যান। হামলার ঠিক আগেই খেয়ে উঠেছিলেন প্রধান মনোরঞ্জন হালদার। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, “আমি হোটেলের বাইরে পায়চারি করছিলাম। কোনও কথা না বলে দুষ্কৃতীরা ঢুকে ইশাবাবুকে গুলি করল। আমি ভয়ে পঞ্চায়েত অফিসে পালিয়ে আসি।”
এই ঘটনার পরে স্থগিত হয়ে যায় সর্বদল বৈঠক। ঘটনাস্থলে যান সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ ভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে তৃণমূল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “পুলিশের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এসে গুলি করে খুন করল আমাদের এক নেতাকে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন জায়গায় পৌঁছেছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।” ইশাবাবুর বিরুদ্ধে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন সুজনবাবু। তাঁর দাবি, “মিথ্যা মামলায় ইশাবাবুকে জড়ানো হয়েছিল।” তৃণমূূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির দাবি, “জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কুলতলির ওই এলাকায় সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানি। সেই কারণেই খুন হন ওই সিপিএম নেতা। এতে আমাদের দলের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জড়ানো হচ্ছে।” |