পারিবারিক গোলমালের জেরেই কি দেড় বছরের শিশুটিকে নালায় ফেলে পালিয়েছিল কেউ?
হাওড়ায় লিলুয়া স্টেশন রোডের নালা থেকে শিশু-উদ্ধারের নেপথ্যে এমনই কাহিনি থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। শিশুটির পরিচয়ের বিষয়ে কিছু সূত্রও মিলেছে। বনগাঁর রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা এক বৃদ্ধ দম্পতি ‘পরিত্যক্ত’ শিশুটিকে তাঁদের নাতি বলে দাবি করে বালি থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই দম্পতি নিত্যগোপাল দত্ত ও আরতি দত্তের দাবি, ওই শিশুটি তাঁদের নাতি, নাম শুভদীপ দত্ত। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে শনিবার বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যথাযথ প্রমাণ মিললে শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হবে।” আগামী ২৮ অগস্ট নিত্যগোপালবাবুকে লিলুয়া হোমে শিশুকল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি)-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে পুলিশ।
পুঁটুলির মধ্যে অসহায় ভাবে নালায় ফেলা হয়েছিল যে শিশুটিকে, সিডব্লিউসি-র নির্দেশে সে এখন কলকাতার কিড স্ট্রিটে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে। অন্য দিকে, বনগাঁর বাড়িতে সংবাদপত্রে তার ছবি দেখা ইস্তক কান্নাকাটি করছেন নিত্যগোপালবাবু ও আরতিদেবী। তবে শিশুটির মা হিসেবে যাঁর কথা পুলিশকে বলেছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি, তিনি এখন নিখোঁজ। প্রণিতা দত্ত নামে ওই মহিলার বিষয়ে খোঁজ-খবর করছে পুলিশ। |
শিশুটির ছবি হাতে আরতি দত্ত এবং নিত্যগোপাল দত্ত। শনিবার। ছবি: পার্থসারথি নন্দী |
কিন্তু কীসের ভিত্তিতে ওই শিশুটির সঙ্গে তাঁদের ‘সম্পর্ক’ দাবি করছেন নিত্যগোপালবাবুরা?
পুলিশের দাবি, নিত্যগোপালবাবু জানান, শুভদীপের ‘বাবা’ প্রসেনজিৎ পেশায় ট্রাক চালক। তিনি বেশির ভাগ সময় ভিন রাজ্যে থাকেন। ২০০৭ সালে তিনি ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রণিতাকে বিয়ে করেন। বনগাঁর প্রতাপগড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। শুভদীপের জন্মের পরে প্রসেনজিৎ-প্রণিতার মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। মাস চারেক আগে দু’জনে বনগাঁয় আলাদা থাকতে শুরু করেন। ওই সময়ে শিশুটি কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে নিত্যগোপালবাবুদের সঙ্গে তাঁর বউমা প্রণিতার গোলমাল বাধে। পুলিশের হস্তক্ষেপে মায়ের কাছেই শিশুটিকে রাখা হয়। এর পরে গত ১৪ মে থেকে তাঁদের বউমা ও নাতির খোঁজ মিলছিল না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নিত্যগোপালবাবু। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
নিত্যগোপালবাবুর মেয়ে মাম্পি দত্ত প্রথমে শ্যামনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে খবরের কাগজের ছবিটি দেখেন। এর পরেই শিশুটির খোঁজে হন্যে হয়ে পড়ে ওই পরিবারটি। নিত্যগোপালবাবুর ছেলে প্রসেনজিৎ এখন বনগাঁয়। তিনিও এ দিন জানান, তাঁর স্ত্রী প্রণিতা শিশুটিকে নিয়ে অজ্ঞাত কোনও জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “বেশ কিছু দিন ধরে আমার স্ত্রী ও ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। বুঝতে পারছি না, কেন বাচ্চাটাকে নালায় ফেলে দেওয়া হল?” |