বিভিন্ন গণসংগঠনের সদস্যসংখ্যা কমছে। ‘পরিবর্তনে’র ধাক্কায় কমছে রাজ্যের নানা অঞ্চলে দলের সদস্যও। ব্যতিক্রম দক্ষিণ ২৪ পরগনা! সেখানে সিপিএম নতুন সদস্য পেয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। জেলা কমিটির তরফে রাজ্য কমিটিকে দেওয়া রিপোর্টে তেমনই তথ্য জানানো হয়েছে।
চার বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই বড় ধাক্কা খেয়েছিল সিপিএম। দক্ষিণের জেলা পরিষদ এখন তৃণমূলের হাতে। শুধু ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই নয়, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূল জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই জেলাতেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের আগে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে সিপিএম। বিশেষত, রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেখানে এখনও সিপিএমের পক্ষে ‘অনুকূল’ হয়নি।
বিগত রাজ্য সম্মেলনেই প্রাথমিক ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সদস্যবৃদ্ধির ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। পরে তা সবিস্তারে পর্যালোচনা হয়েছে। তার পরেই প্রায় আড়াই হাজার নতুন সদস্যপদের হিসাব রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। রাজ্যের বহু জায়গায় কর্মীদের একটি বড় অংশ সক্রিয় ভাবে দলের কাজ করতে চাইছেন না বলে বারেবারেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনা এই ধারার বিপরীতে হাঁটতে পেরেছে বলে সিপিএম সূত্রের বক্তব্য।
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “২০১০ সালের অগস্ট মাসে সুজন চক্রবর্তী জেলা সম্পাদক হন। দলীয় সদস্যদের মধ্যে সুজনবাবুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। অনেক দিন যাবৎ এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীকে বেকায়দায় ফেলতে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কর্মীর দলীয় সদস্যপদ নানা ভাবে আটকে দিয়েছিল। জেলা সম্পাদক হওয়ার পরে সুজনবাবু যোগ্য ব্যাক্তিদের সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন।” সিপিএমের সদস্যপদ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যায় জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর আর এক সদস্যের মত, “শুধু সুজনবাবুর উদ্যোগ নয়। তৃণমূলের মোকাবিলায় এই জেলায় সিপিএমের ত্রিশক্তি মাঠে নেমে পড়েছে! নিচু তলার কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মতো দাপুটে নেতারাও। সঙ্গে সুজনবাবু রয়েছেন। নিচু তলার কর্মীরা তাতে মনোবল ফিরে পাচ্ছেন।”
সুজনবাবুর বক্তব্য, সদস্যপদ নবীকরণ করেননি, এমন কর্মীর সংখ্যা তাঁর জেলায় তুলনামূলক ভাবে কম। তাঁর কথায়, “বয়সজনিত কারণে কিছু সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ওই সদস্যেরা দলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত রয়েছেন। বয়সজনিত কারণে তাঁদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মাত্র। শারীরিক অসুস্থার কারণেই ওঁরা সদস্যপদ নবীকরণ করেননি।” চার বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৭টি জোনাল কমিটিতে সিপিএমের সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজার। এ বার সব মিলিয়ে আড়াই হাজার নতুন সদস্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুজনবাবু।
জেলা নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, জেলায় কোথাও সিপিএম কর্মীরা আক্রান্ত হলেই সুজনবাবু, কান্তিবাবু সেখানে হাজির হয়ে যাচ্ছেন। আর এক দিকে রেজ্জাকও ‘হাল’ ধরে রেখেছেন। ক্যানিং-বাসন্তী-ভাঙড় এলাকায় নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। রেজ্জাক নিজেও বেশ কয়েক বার তৃণমূল সমর্থকদের হাতে ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন। কিন্তু নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করছেন। এই ‘লড়াই’য়ের ফায়দাই সদস্যপদের ক্ষেত্রে সিপিএম পেয়েছে বলে দলের একাংশের মত। তবে জেলা সিপিএম সূত্রে খবর, দলের সব শাখা সংগঠনগুলিতেই সদস্যসংখ্যা কমেছে। এক মাত্র দলের সদস্যই বেড়েছে। কৃষকসভার সদস্য ৭ লক্ষ থেকে কমে হয়েছে ৬ লক্ষ, ডিওয়াইএফআই ৬ লক্ষ থেকে কমে ৪ লক্ষ এবং এসএফআই ৬০ হাজার থেকে কমে গিয়ে ৪২ হাজার হয়েছে। দলের সদস্য বৃদ্ধি এবং শাখা সংগঠনের সদস্য হ্রাসের এই ‘বৈপরীত্য’ও দলে পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জেলা কমিটি সূত্রের বক্তব্য। কিন্তু দলের সদস্য বাড়লেও কৃষক, যুব ও ছাত্র সংগঠনে অন্য ছবি কেন? সুজনবাবুর ব্যাখ্যা, “কলেজ-সহ নানা এলাকায় তৃণমূলের দাপটে সাধারণ মানুষ কিছুটা দিশাহারা। সেই কারণেই ওই সদস্যপদ কমে গিয়েছে। কিছু দিন পরে ওই সদস্যপদও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।” |