ওঁরা এসেছিলেন ‘দিদি’কে দেখতে। এসেছিলেন ‘দিদি’র নির্দেশ মতো ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ার দিশা খুঁজে পেতে।
দিশা দেখাতে ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আমি চাই একশোটা তরতাজা যুবক। যারা শুধু নিজের কথা ভাববে না। নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের জন্য কাজ করার মতো আরও হাজারটা যুবক তৈরি করবে।” শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘যুবা’র দরবারে ‘শিক্ষকে’র মতো মমতা প্রশ্ন ছুঁড়লেন, “চাকরি করবেন নাকি দেশ গড়বেন?” জবাব ফিরে আসার আগে মমতাই বললেন, “দু’টো এক সঙ্গেও করা যায়। যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। পয়সার জন্য চাকরি তো করতেই হবে। কিন্তু নিজেরা যদি নেতা তৈরি হন, লক্ষ লক্ষ লোককে চাকরি দিতে পারবেন।” ‘দিদি’র এই আশাপূরণের ‘শপথ’ নিয়ে নিজেদের চাকরি, ব্যবসা সামলে ‘আগামী’র নেতা হওয়ার স্বপ্নদেখা ‘যুবা’রা সমস্বরে মমতাকে জানাল, তারা খারাপ কাজ করবে না। ‘দিদি’ তাঁদের জানালেন, মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, সৎ, স্বচ্ছ ‘আগামী প্রজন্ম’ লক্ষ টাকার চাকরির প্রলোভন ছেড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরির সংস্থানে নিজেদের উৎসর্গ করবে। ‘যুবা’ দেখল এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক সম্মেলন। মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, ফিরহাদ হাকিমরা রাজনৈতিক সভার মেজাজে নয়, বৈঠকী আলাপচারিতার মোড়কে ‘আগামী’কে উদ্দীপ্ত করলেন। মমতার ছাত্রী থেকে নেত্রী, নেত্রী থেকে প্রশাসক হওয়ার লড়াকু উড়ান-কথা শোনালেন। মমতার ‘আদর্শ’ তুলে ধরতে গিয়ে এ দিনের এই ‘অ-রাজনৈতিক’ সভায় স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন মুকুল-পার্থ-সুব্রতবাবুরা। সভার দুই সাংসদ-সঞ্চালক ডেরেক ও ব্রায়েন এবং কুণাল ঘোষ কথাচ্ছলে নেতাদের কাছে শুনতে চাইলেন তাঁদের চোখে মমতার রাজনৈতিক জীবনের নানা-কথা। নেতাদের স্মৃতিচারণায় ‘যুবা’ শুনল, কলেজছাত্রী মমতা কী ভাবে সিপিএমের হামলার মুখে দাঁড়িয়ে সহকর্মীদের উদ্ধার করেছেন। শুনল, সোনার মুকুট উপহার পেয়েও তা এক কিশোরীকে দিয়ে দিয়েছেন মমতা।
সাংসদ সুব্রতবাবু তুলে ধরলেন সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের সময় নেত্রীর ২৬ দিনের অনশনের কথা। চারিত্রিক ‘স্বচ্ছতা’র দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ‘যুবা’কে মমতার পরামর্শ, “টাকা চেয়ে, চুরি করে, প্রতারণা করে রাজনীতি নয়।” মমতা জানান, তাঁর আঁকা ছবি বিক্রি করে পঞ্চায়েত ভোটের খরচ তুলবেন। ‘যুবা’কে উৎসাহ দিলেন চরিত্র গঠনে। বললেন, “হতাশাগ্রস্ত হবেন না। নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন না।”
কেবল মানুষ হিসাবেই নয়, ভবিষ্যতে দক্ষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে গড়ে তুলতে ‘যুবা’কে সুদীপবাবু বোঝালেন, “পুঁথিগত পড়াশোনার বাইরেও অনেক কিছু জানতে হবে।” তিনি ‘যুবা’র নেতৃত্বকে পরামর্শ দিলেন, সংসদে অধিবেশনের সময় বিতর্ক বা সংসদীয় প্রক্রিয়া কেমন ভাবে চলে, তা লোকসভা, রাজ্যসভায় মাঝেমধ্যে ১০-২০ জন করে নিয়ে গিয়ে দেখাতে। “এতে ওঁদের অভিজ্ঞতা বাড়বে।”
দলের নেতা-কর্মীদের মমতা বারবার দুর্নীতি, সিন্ডিকেট-ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এ দিন ‘যুবা’র সভায় আবার মমতা সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করেন। ‘যুবা’র সদস্য, পেশায় চিকিৎসক সায়ক রায় বলছিলেন, “প্রোমোটারি, সিন্ডিকেট বা কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে না, এটাই যুবা’র প্রধান শর্ত। সৎ, স্বচ্ছ রাজনীতিক তৈরির কারখানা এই যুবা। এটাই দিদি ও আমাদের সকলের স্বপ্ন।” মমতার সেই আদর্শ-স্বপ্নের আকর্ষণেই ‘যুবা’র মাধ্যমে রাজনীতির বৃত্তে আসা ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক পারমিতা চট্টোপাধ্যায় বললেন, “ভবিষ্যতে মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা পাই মমতাদিকে দেখে। উনি আমাদের কাছে রোল মডেল।” প্রথম বার সামনাসামনি নেত্রীকে দেখে আপ্লুত আসানসোল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়ঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “দিদির কাছ থেকে জানতে চাই, কী ভাবে এগোবো। ওঁকে না দেখলে রাজনীতিতে আসার কথা হয়তো ভাবতামই না!” পিসি মমতার সামনেই তাঁর তরুণ সহকর্মীদের কাছে ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি, “সোনার বাংলা গড়তে দিদির আত্মত্যাগ, সততার পথেই আরও অনেক ভাল কাজ আমাদের করতে হবে। এই শপথই এ দিন আমরা নিলাম।” |