ডনের বাউরালকে হারাতে চলেছে পঙ্কজের কুমোরটুলি
বাউরালে যে জলের ট্যাঙ্কের গায়ে বল ছুড়ে ফিরতি বল মেরে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করতেন ডন ব্র্যাডম্যান, সেই ঐতিহাসিক জায়গার নামকরণ স্যর ডনের স্মৃতিতে রাখা হয়েছে কি? পঙ্কজলাল রায় তাঁর বাড়ির সামনে যে পার্কের দেওয়ালে বল ছুড়ে ফিরতি বলে নানান স্ট্রোক খেলে ব্যাটিং অনুশীলন করতেন, সেই শতাব্দীপ্রাচীন কুমোরটুলি পার্কের নাম পাল্টে ‘পঙ্কজ রায় পার্ক’ রাখার দাবি কিন্তু শনিবার রাজ্য সরকারের তরফে উঠে গেল। কুমোরটুলি পার্কের প্রধান ফটকের মুখে ‘বাংলার ক্রিকেটের প্রথম পুরুষ’-এর আবক্ষ মূর্তি উদ্বোধনের দিন এই প্রস্তাব দিলেন স্বয়ং ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। তবে মন্ত্রী আড়ম্বরপূর্ণ, ক্রীড়াজগতের বহু নক্ষত্রে ভরা, জমজমাট অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছনোর আগেই কুমোরটুলি পার্কের নাম পাল্টে ‘বাংলার সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান’-এর নামে রাখার প্রস্তাব নিজের ভাষণে দেন চুনী গোস্বামী। পঙ্কজ রায়ের নেতৃত্বেই রঞ্জিতে গিলক্রিস্টের হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে অভিষেক বাষট্টির এশিয়াড চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক চুনীর।
পঙ্কজ রায়ের মূর্তি উন্মোচন করে চাঁদু বোরডে।
শুধু চুনী নন, বাংলার প্রাক্তন অসংখ্য রঞ্জি অধিনায়ক। উৎপল চট্টোপাধ্যায়, রাজু মুখোপাধ্যায়, গোপাল বসু। জাতীয় নির্বাচকের দৌড়ে থাকা দীপ দাশগুপ্ত ও দেবাঙ্গ গাঁধী মঞ্চে পাশাপাশি বসা। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। পঙ্কজ-আবেগে তৈরি হল এ রকম অনেক বিরল চিত্র। অশোক দিন্দার মতো বাংলার আধুনিক প্রজন্মের তারকা ক্রিকেটার। প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া-সহ সিএবি-র প্রায় পুরো পরিচালন সমিতি। মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, স্থানীয় পুরমাতা মিতালি সাহা (যাঁদের উদ্যোগে এই আবক্ষ মূর্তি), স্থানীয় বিধায়ক। প্রয়াত পঙ্কজ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়, সুযোগ্য টেস্ট ক্রিকেটার-পুত্র প্রণব রায়-সহ পরিবারের সদস্যরা। সুসজ্জিত বিশাল মঞ্চে একঝাঁক নক্ষত্র। তবে মধ্যমণি অবশ্য আটাত্তর বছর বয়সেও অসুস্থ শরীর নিয়ে সুদূর পুণে থেকে ছুটে আসা পঙ্কজ রায়ের এক প্রাক্তন জাতীয় দলের সতীর্থ ক্রিকেটার।
চন্দ্রকান্ত গুলাবরাও সংক্ষেপে চাঁদু বোরডে সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র এক ফোন কলে তাঁর ‘মহান পুরোনো বন্ধু’র আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করতে কলকাতায় আসতে ‘হ্যাঁ’ বলতে যে এক সেকেন্ডও নেননি, নিজেই স্বীকার করলেন। বক্তৃতার গোড়াতেই। প্রাক্তন আইসিসি প্রধান ডালমিয়ার চোখে পঙ্কজ রায় যদি হন “ব্যাটসম্যান হিসেবে অসীম সাহসী। জাতীয় নির্বাচক হিসেবে সত্যিকারের ভদ্রলোক,” তা হলে এ দিনের অনুষ্ঠানেও ‘ওপেন’ করতে এসে প্রণব রায় বলে দিলেন, “বাবা অ্যাডাভেঞ্চারাস ছিলেন, একইসঙ্গে ছিলেন ভীষণ সহজ-সরল।” পরজন্ম বলে কিছু থাকলে আবার পঙ্কজ রায়ের ছেলে হয়ে জন্মাতে চান বলার সময় প্রণবের চোখে জলের ধারা নেমে এল।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে পাশে বসা গোপাল বসু বলছিলেন, “পঙ্কজদা’র ব্যাটিংয়ের মূল কথা ছিল ‘টেক ইট সিম্পল’। নেটে চার বার ব্যাটিং করতেন সেই ‘সহজ’ কাজটা ম্যাচে করার জন্য।” চুনী গোস্বামী আবার পঙ্কজের ক্রিকেট-টিপসের ব্যাপারেও সহজ মনোভাবের কাহিনি শোনালেন। “আমি কিছুতেই রঞ্জিতে সেঞ্চুরি পাচ্ছি না কেন, জানতে চাওয়ায় পঙ্কজদা আমাকে বলেছিলেন, তুই তো এখন বাংলার ক্যাপ্টেন। স্রেফ ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে উঠে যা। দেখবি সেঞ্চুরি করার সময় পেয়ে যাবি। ছ’নম্বরে নামলে সে সময়টা থাকে না।”
আর সব শেষে চাঁদু বোরডে বললেন, “পঙ্কজ আমার দেখা বিশ্বের টেকনিক্যালি নিখুঁত ওপেনারদের মধ্যে অন্যতম সেরা। হেলমেট ছাড়া, আঠারো গজ দূর থেকে (সেই আমলে বোলারের ফ্রন্টফুট রুল ছিল না) হল-গিলক্রিস্টের ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ও কী করে ওপেন করত ভাবলে এখনও আমার বিস্ময় লাগে! তখন উইকেট ঢাকা থাকত না। বাউন্সারের সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হয়নি। আর স্পিন বোলিং তো পঙ্কজ খুন করে ফেলত।”
৮ নম্বর অভয় মিত্র স্ট্রিট বাংলা ক্রিকেটের ঐতিহাসিক ঠিকানার (যে বাড়ি তিন জন টেস্ট ক্রিকেটার-সহ আরও জনাচারেক রঞ্জি ক্রিকেটার দিয়েছে) ঠিক সামনেই তাঁর আবক্ষ মূর্তি টিমমেট চাঁদু বোরডের হাতে উন্মোচিত হতে দেখলে পঙ্কজ রায় আজ আর নিশ্চয়ই বলতেন না, ‘ফালটুস’! নিজের প্রংশসা শুনলেই যেটা তাঁর প্রিয় প্রতিক্রিয়া ছিল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.