বব হাউটনের সময় তিনি এক নম্বর। উইম কোভারম্যান্সের সময়ও তিনি অপরিহার্য-ই। পাঁচ মাসের চোট সারিয়ে ফের নেহরু কাপে স্বমহিমায়। তবুও দেশের এক নম্বর গোলকিপার সুব্রত পাল মনে করেন, অধিনায়কত্ব নয়, প্রথম এগারোয় না থাকলেই তিনি সবচেয়ে বেশি দুঃখ পাবেন। “সবারই ইচ্ছে থাকে দেশের অধিনায়কত্ব করার। কিন্তু ক্যাপ্টেন্সির জন্য আমি লালায়িত নই। খেলতে ভালবাসি। টিমে খেলে যেতে পারলেই আমি খুশি। আর অধিনায়ক একা জেতায় না। এগারো জন ভাল খেললেই টিম জেতে।”
নেহরু কাপে কেন সুনীল ছেত্রী অধিনায়ক, কেন সুব্রত পাল ননতা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে ফুটবল মহলে। কোটি টাকার চুক্তিতে ক্লাব দলে সই করা সুব্রতর কিন্তু তাতে কোনও হেলদোল নেই। বলে দিলেন, “আমাদের এ বারের টিমটা নেহরু কাপ জেতার হ্যাটট্রিক করলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব। তিনটি নেহরু কাপ জয়েরই সঙ্গী হতে পারছি, এটা বড় ব্যাপার। দেশের হয়ে দু’টো ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছি। সেই ম্যাচগুলো মনে রেখেছি, জেতার জন্য। ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য নয়।”
নেহরু কাপে সিরিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। মলদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে তাঁর হাত না থাকলে বিপদে পড়ত ভারত। পিছন থেকে পুরো দলকে পরিচালনা করছেন। কোভারম্যান্সের জমানায় তাঁর পা থেকে শুরু হচ্ছে আক্রমণ। সেই সুব্রত অবশ্য নতুন প্রজন্মের দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। “সিরিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে অনেকেই বলেছিলেন, আগের দু’টো কাপে আমরা ওদের হারাতে পারিনি রাউন্ড রবিন লিগে। এ বারও পারব না। কিন্তু আমরা সবাই মিলে জিতেছি। এবং টিম চাপের মুখ থেকে বেরিয়ে এসে জিতেছে। মলদ্বীপের বিরুদ্ধে আরও সংহত হয়েছে দল।” ৩-০ হয়েছে, সুব্রত বলছেন, “আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম। মনে রাখতে হবে সাফের দৌলতে ওরা আমাদের সব জানে।” তাঁর ব্যক্তিগত মত, ভাল দল হলেই ট্রফি জেতা যায় না। বললেন, “তা হলে ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা সব ট্রফি জিতত। চ্যাম্পিয়ন্স লাক একটা বড় ব্যাপার।” তবে তিনি নিশ্চিত, যত দিন যাবে তত সিনিয়ার-জুনিয়র মিলিয়ে নতুন ভারত ভাল খেলবে।” |
হাউটন বরাবরই সোদপুরের মিষ্টুর প্রশংসা করতেন। মলদ্বীপ ম্যাচের পর সুব্রত-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ ডাচ-কোচ কোভারম্যান্সও। বললেন, “সুব্রত খুব ভাল কিপার। এরিয়াল বলে খুব স্ট্রং। আজ যে গোল খায়নি তাতে আমি খুশি। গোল খেয়ে গেলে দলের আত্মবিশ্বাসটা চলে যায়। সুব্রতর মতো কিপার থাকলে যে কোনও দলের আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য।”
সুব্রতর এই ধারাবাহিক সাফল্যের রসায়ন কী? সিরিয়া এবং মলদ্বীপের বিরুদ্ধে কোন ম্যাচটা সেরা? শুনে বেশ দার্শনিক সুব্রত। বললেন, “আমার ভাল খেলার রসায়নপরিশ্রম, অনুশীলন, গোলের নীচে দাঁড়িয়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা। আর গোলকিপারের কাজই হল গোল আটকানো। দু’টো ম্যাচে সেটা করেছি। আর আগে চ্যাম্পিয়ন হই, তার পর বলব কোনটা সেরা ম্যাচ।”
সুনীল যেমন পর্তুগাল থেকে ফিরেছেন, তেমনই জার্মানির লিপজিগ ক্লাব থেকে সরাসরি জাতীয় শিবিরে যোগ দিয়েছেন সুব্রত। প্রচণ্ড মুখচোরা, নিজের ঢাক পেটাতে জানেন না। সাক্ষাৎকারে তীব্র অনীহা। অনেক বার ফোন করলে তবেই রাজি হন। এটা কি তাঁকে পিছিয়ে দিচ্ছে? কাতারে এ এফ সি কাপের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাগজগুলো যাঁকে দেখে ‘ভারতের স্পাইডারম্যান’ বলেছিল সেই সুব্রত বললেন, “আমি স্বামী বিবেকানন্দর ভক্ত। কর্মে বিশ্বাসী। ভাল খেললে সুযোগ আসবেই। তা সে অধিনায়কত্ব বলুন বা বিদেশে খেলা। তবে স্পষ্ট বলছি, বিদেশের ক্লাবে খেলতে চাই। ইউরোপে খেলতে চাই। না পেলে যেখানে পাব যাব। পরের বছর আবার চেষ্টা করব বিদেশের কোনও ক্লাবে ট্রায়াল দিতে।”
নেহরু কাপ খেলেই আবার কলকাতায় গিয়ে নামতে হবে প্রয়াগ ইউনাইটেডের হয়ে। র্যান্টি মার্টিন্স-কার্লোস হার্নান্ডেজরা গোল করে দলকে জেতাবেন, আর সুব্রতর হাত আটকাবে বিপক্ষের শট। যদিও এ সব এখন মাথায় নেই সুব্রতর। বললেন, “এখন নেহরু কাপ নিয়েই ভাবছি। ক্লাব নিয়ে ভাবব এর পর। প্রয়াগ ভাল টিম করেছে। ওরা আমেরিকান গোলকিপার কোচ এনেছে। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। ফিরে গিয়ে দেখা করব। নতুনকিছু শেখালে শিখব। শেখার তো কোনও শেষ নেই।” শেষ ডিফেন্ডার হিসাবে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার এর চেয়ে ভাল পথ যে আর নেই! |