ভারত-৩ (সুনীল পেনাল্টি-সহ ২, নবি)
মলদ্বীপ-০ |
চুনী গোস্বামী-প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা মাঠে ছিলেন না। ফেডারেশনের সংবর্ধনা নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন সনৎ শেঠ আর প্রশান্ত সিংহও। ওঁরা যদি মাঠে থাকতেন তা হলে নিশ্চয়ই তৃপ্ত হতেন। দেখতে পেতেন তাঁদের সময়ের মতোই জাতীয় দলকে জেতাচ্ছেন বঙ্গসন্তানরা। বহু বছর বাদে।
সোদপুর থেকে গঙ্গা পার হয়ে যাওয়া যায় হুগলি। বাংলার দুই জেলার দুই ভূমিপুত্রের যুগলবন্দিতেই শনিবার নেহরু কাপে মলদ্বীপকে হারিয়ে দিল কোভারম্যান্সের ভারত। হাঁটা শুরু করল ফাইনালের দিকে। রাউন্ড রবিন লিগে পরিস্থিতি যা তাতে পরের ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ড্র করতে পারলেই টুর্নামেন্ট জয়ের হ্যাটট্রিকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে ভারত।
সুনীল ছেত্রী জোড়া গোল করেছেন। দু’টো ম্যাচে তিন গোল এখনও পর্যন্ত কারও নেই। হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন। পোস্টে বল না লাগলে।
সবই ঠিক এবং বাস্তব। কিন্তু ম্যাচের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন দুই বঙ্গসন্তানসুব্রত পাল আর রহিম নবি। ফের ‘স্পাইডারম্যান’ হয়ে তীব্র চাপের মুখ থেকে দলকে প্রথম ৪৪ মিনিট বাঁচিয়ে রেখেছেন সুব্রত। কতগুলো নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন মিষ্টু? নোট-বই বলছে তিনটি। মলদ্বীপের সেরা স্ট্রাইকার আসফাক ওয়ান-টু-ওয়ান পেয়েও হারাতে পারেননি সুব্রতকে। তাঁর হাঁটু আর হাত ম্যাজিক দেখিয়েছে। আর আসাদুল্লার একটা গোলার মতো শট উড়ে গিয়ে আটকেছেন দেশের এক নম্বর গোলকিপার। পিছন থেকে পুরো দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধিনায়ক না হয়েও। তাঁর বাজখাঁই-গলা শোনা গিয়েছে স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে। |
আর প্রথম দুটো গোলের পিছনেই নবির অবদান। সুনীলের পেনাল্টিটা নবিই বিপক্ষের বক্সে ঢুকে আদায় করেছেন। তার পর ক্লিফোর্ডের বাঁক খাওয়া কর্নারে দেড় ফুট লাফিয়ে হেডে পাণ্ডুুয়ার ছেলে নিজেই ২-০ করেছেন। এর পরে যা হল তা এক কথায়, ‘সুনামি’। আট বছর আগে ভয়ঙ্কর ‘বক্সিং-ডে সুনামি’ কেড়ে নিয়েছিল মলদ্বীপের অনেকখানি ভূখণ্ড। এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে কার্যত মাঠের প্রতিটি ইঞ্চি কেড়ে নিল ভারত। ‘রেড স্ন্যাপার্স’ নামে ডাকা হয় মলদ্বীপ দলকে। সমুদ্র-ঘেরা ওই জনপদে এক ধরনের লাল-রঙের মাছের নামের অনুকরণে। সেই ‘মাছ’ শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট খাবি খেল।
কোভারম্যান্সের সাদা জামায় কি তুকতাক আছে? দুটো ম্যাচে আলাদা রঙের প্যান্ট পরে এলেও ডাচ কোচ জামা বদলাননি। দুটো ম্যাচের গোলের সময়ের অদ্ভুত সমাপতন দেখে মাঠে উপস্থিত হাজার পঁচিশ দর্শকের চোখেমুখে বিস্ময়! সিরিয়া ম্যাচে বিরতির এক সেকেন্ড আগে গোল পেয়েছিল ভারত। আজ মলদ্বীপের বিরুদ্ধেও তাই! দেশের এই মুহূর্তে একমাত্র ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলার রহিম নবি। গোলকিপার ছাড়া সব জায়গায় খেলতে পারেন। বিভিন্ন কোচের হাত ঘুরে এখন সেরা সাইডব্যাক। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলতে খেলতে ‘ওয়াইড লেফট মিডিও’ ক্লিফোর্ড মিরান্ডার সঙ্গে চমৎকার যোগসূত্র গড়ে উঠেছে নবির। বাঁ দিক থেকে বারবার উঠে আসছিলেন বিপক্ষ বক্সে কাট করে। সেটার থেকেই ভারতের পেনাল্টি-লাভ। মলদ্বীপের মহম্মদ সিফনের হাতে লাগে বল। সুনীল প্রকৃত ক্যাপ্টেনের মতো এগিয়ে গিয়েছেন কিক মারতে। সুনীল ৩-০-র যে গোলটা করেছেন সেটাও মনে রাখার মতো। শরীর ছুড়ে হেড করে। তাঁকেই ফের ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি দিয়েছেন নির্বাচকরা। তবে সেটা পেতে পারতেন নবি বা সুব্রতও।
দিল্লির আকাশ সারা দিন মেঘে মুখ ঢেকে থাকলেও ম্যাচের সময় বৃষ্টি হয়নি। ফলে কোভারম্যান-স্টাইল বদলাতে হয়নি। মাটিতে বল রেখে শুধু পাস খেলে গিয়েছেন মেহতাব-সঞ্জু-ক্লিফোর্ড-রাজুরা। জীবনের প্রথম জাতীয় সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে রবিন সিংহও সেই পথে হেঁটেছেন। সবথেকে বড় কথা, ভারতীয় টিমের দুবর্র্লতা যে জায়গাটায় সেই মিস পাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ম্যাচ শেষে ডাচ-কোচের গলায় তাই চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস। “মাটিতে বল রেখে খেলাই ভারতের জন্য সেরা স্ট্র্যাটেজি।” বব হাউটনের জমানায় ভারতের ছিল লং বল গেম। হাউটন বনাম কোভারম্যান্সের স্ট্র্যাটেজির ‘যুদ্ধ’ লেগে গেল নেহরু কাপ থেকেই!
ভারত: সুব্রত, নির্মল (ফ্র্যাঙ্কো), গৌরমাঙ্গি, রাজু, নবি, সঞ্জু (রবিন), মেহতাব, লেনি, ক্লিফোর্ড (অ্যান্টনি), ফ্রান্সিস, সুনীল। |