অনিল কুম্বলের সঙ্গে তাঁর মিল অনেক। কুম্বলের মতো তিনিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মনোযোগী ছাত্র। পেশা হিসেবে তবু ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছেন। কুম্বলের মতোই।
বিরাট কোহলির মতো টিম ইন্ডিয়ার ‘জেন ওয়াই’ যখন বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যস্ত, তখনও তিনি মধ্যবিত্ত জীবনের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছেন বরাবর। আইপিএলে সাম্প্রতিক সাফল্যের পরেও পশ্চিম মালাবামে তাঁর বাড়ি সংস্কারের মুখ দেখেনি। বাড়ির সামনেও দাঁড়িয়ে থাকে না দূর্মূল্য স্পোর্টস কার।
স্বভাবে শান্তশিষ্ট। আপাদমস্তক ভদ্রলোক। পরিবার তাঁর কাছে অনেক আগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপের মধ্যেই ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ঢুকে পড়তে দু’বার ভাবেন না। মায়ের ইচ্ছে মেনে।
কুম্বলের মতো তাঁরও বোলিংয়েও আগুন। বৈচিত্রগত তফাত আছে। কুম্বলে লেগস্পিনার। তিনি অফস্পিনার। কুম্বলের জায়গা তিনি কোনও দিন নিতে পারবেন কি না, সেটাও জানা নেই। তবে চেতেশ্বর পূজারার মতো রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের আবিষ্কার বলা যায়।
আজ পর্যন্ত ছ’টা টেস্টে চল্লিশের কাছে উইকেট। খুব খারাপ কি? বিদেশেও অশ্বিনের স্পিন কাজ দিয়েছে। আর হায়দরাবাদে তো স্রেফ তাঁর সামনেই কাঁপছে কিউয়িরা। |
গত কাল তিনটে, শনিবার আরও তিনটে। সব মিলিয়ে ছ’টা। উপ্পলে অশ্বিনের বোলিংয়ের হিসেব শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে। ১৬.৩-৫-৩১-৬! এক ইনিংসে ছ’উইকেট অশ্বিনের অভিষেক টেস্টেই আছে, কিন্তু এ বার তিনি আরও কৃপণ। আরও ভয়ঙ্কর। শনিবারের বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে খেলা হল মাত্র ৩৭ ওভার। কিন্তু তার পরেও যে টেস্টে ‘অ্যাডভান্টেজ’ ধোনি বলার জন্য যে এতটুকু ভাবতে হচ্ছে না, তার পিছনে থাকছে তামিলনাড়ু স্পিনারের হাতযশ। অশ্বিন আসার আধঘণ্টার মধ্যেই নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের লেজ সাফ। ১৫৯ রানে গুটিয়ে ফলো অনের গহ্বরে ঢুকে পড়লেন টেলররা।
অথচ অশ্বিনকেই কি না আক্রমণে আনতে চরম অনীহা দেখাচ্ছিলেন ধোনি! সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। একবার ঝিরঝিরে হয়ে গিয়েছে, অঝোরে নামার সম্ভাবনা ছিল যে কোনও সময়। সেটা মাঝদুপুরে নামলও। আর তার তীব্রতা এতটাই যে, ম্যাচ বন্ধ করে দিতে হল মাঝপথে। এই অবস্থায় যে কোনও অধিনায়ক চাইবেন, নিজের সেরা বোলারকে লেলিয়ে দিয়ে বিপক্ষের সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বোঝাপড়া মিটিয়ে নিতে। কিন্তু প্রথম একঘণ্টা অশ্বিনের দেখা নেই। বরং জাহির, উমেশ, ওঝাকে দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন ভারত অধিনায়ক। কেন, তার উত্তর তিনিই দিতে পারেন। একটা যুক্তি হতে পারে, হায়দরাবাদের মেঘলা আকাশ। তাই পেসারদের বেশি ব্যবহার। কিন্তু তা হলে প্রশ্ন ওঠে, ওঝা কেন? নিঃসন্দেহে বাঁ-হাতি স্পিনার ভাল বল করেছেন, কিন্তু অশ্বিনের মতো তাঁকে বিপজ্জনক কখনওই মনে হয়নি। অশ্বিনের বৈচিত্রও বেশি। শনিবারের তিনটে উইকেট এল তিন রকম ভাবে। একটা কট অ্যান্ড বোল্ড, ব্যাট-প্যাড একটা, আর শেষেরটা স্রেফ সোজা ঢুকে এল স্টাম্পে। এবং সেরা বোলিংয়ের পুরস্কার? দ্বিতীয় ইনিংসে আবার এক ঘণ্টা দেখা নেই! অথচ ধোনি শুরু করলেন নতুন বল স্পিনার ওঝার হাতে তুলে দিয়ে! স্কোরটা দিনের শেষে ৪১-১ না হয়ে ৪১-৩ হলে, লাভটা কার হত বুঝতে কী খুব বেশি বুদ্ধি খরচের দরকার পড়ে?
ওঝা অবশ্য বলে গেলেন, ভারতীয় ক্রিকেটে বিশ্বমানের স্পিন-জুটি তৈরির ঐতিহ্য বরাবরের। “কুম্বলে-হরভজনের জুটির কথা তো সবাই জানেন। আমার আর অশ্বিনের জুটিও আস্তে আস্তে কাজ দিচ্ছে।” সেটা ওঝা বুঝছেন। কিন্তু তাঁর অধিনায়ক? ইনিংস হার এড়াতে নিউজিল্যান্ডের এখনও ২৩৮ দরকার ঠিকই। কিন্তু ম্যাকালাম আছেন। রস টেলরের নামা বাকি। আর হায়দরাবাদের আবহাওয়া অফিসের রিপোর্ট বলছে, আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা যথেষ্ট। আর সব সময় ভুলের ক্ষমা হবে, তার গ্যারান্টি আছে?
|
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৪৩৮। |
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১০৬-৫) |
ফ্রাঙ্কলিন নঃআঃ ৪৩
ফান উইক এলবিডব্লিউ উমেশ ০
ব্রেসওয়েল স্টাঃ ধোনি বো ওঝা ১৭
পটেল ক এবং বো অশ্বিন ১০
বোল্ট ক গম্ভীর বো অশ্বিন ৪
মার্টিন বো অশ্বিন ০
অতিরিক্ত ১১।
মোট ১৫৯।
পতন: ১১১, ১৪১, ১৫৩, ১৫৯, ১৫৯।
বোলিং: জাহির ১১-৪-৩৩-০, উমেশ ৮-০-২৪-১, ওঝা ২১-৬-৪৪-৩,
অশ্বিন ১৬.৩-৫-৩১-৬, সহবাগ ২-০-৪-০, রায়না ২-০-৬-০, সচিন ১-০-৬-০।
|
নিউজিল্যান্ড
দ্বিতীয় ইনিংস |
গুপ্টিল এলবিডব্লিউ ওঝা ১৬
ম্যাকালাম ব্যাটিং ১৬
উইলিয়ামসন ব্যাটিং ৩
অতিরিক্ত ৬।
মোট ৪১-১ (১৮ ওভারে)।
পতন: ২৬।
বোলিং: ওঝা ৯-৪-১৩-১, জাহির ৫-২-৪-০,
উমেশ ৩-০-১৩-০, অশ্বিন ১-০-৫-০। |
|
|