দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
সুপ্রিম কোর্টে পি চিদম্বরম অভিযোগ-মুক্ত হওয়ার পরে এ বারে ধাপে ধাপে গোটা মনমোহন সরকারই টুজি মামলায় ‘নিষ্কলঙ্ক’ হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। সেই ‘আতঙ্কে’ই কয়লা কেলেঙ্কারির অভিযোগকে চূড়ান্ত ও অমোঘ অস্ত্র ধরে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন তাঁরা।
গত কালের সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনা করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, টুজি কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা যতটা দোষী, ততটাই দায়ী ছিলেন সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমও। তিনি এই মামলা থেকে রেহাই পেলে অদূর ভবিষ্যতে রাজাও নির্দোষ প্রমাণ হতে পারেন। তখন কংগ্রেস প্রচার করবে, আদতে টুজি বণ্টনে রাজকোষে কোনও লোকসানই হয়নি, কোনও দুর্নীতিও হয়নি। যেমন কয়লা কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও চিদম্বরম, সলমন খুরশিদ, শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালরা বলতে শুরু করেছেন, বণ্টন হওয়া কয়লা খনি থেকে কোনও কয়লাই তোলা হয়নি, তাই ক্ষতির অভিযোগও ভিত্তিহীন।
 এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ থেকে মনমোহন সরকার রেহাই পেয়ে গেলে বিজেপির আক্রমণও মিইয়ে যাবে। নিলামে খনি বণ্টন সংক্রান্ত একটি বিল পাশ করাতে চাইছে সরকার। তার আগে ইতিমধ্যে বণ্টিত হওয়া খনিগুলি বিলির কাজ স্থগিত রাখা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিরোধীদের হট্টগোল সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী যাতে সংসদে বিবৃতি দিতে পারেন, তারও তোড়জোড় চলছে। সোমবার বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ বিরোধী দলগুলি ও মুলায়ম-মায়াবতীর মতো ইউপিএ-র সহযোগী দলগুলির যে বৈঠক ডেকেছেন, সেখানে এনডিএ-র বাইরের দলগুলির যাওয়া আটকাতে উঠে পড়ে লেগেছে কংগ্রেস। মুলায়ম-মায়াবতী ও বামেরা সেই বৈঠকে না যাওয়ার কথা ইতিমধ্যে সুষমাকে জানিয়েও দিয়েছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, তাঁরা একঘরে হচ্ছেন। সংসদ চলতে না দেওয়ার দায় তাঁদেরই ঘাড়ে এসে পড়ছে। টিম-অণ্ণার মধ্যে কিরণ বেদীরা বিজেপির পক্ষে কথা বললেও অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা কাল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছেন। (পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই বিক্ষোভ করতে দেবে না।) আগে টুজি, এয়ারসেল-ম্যাক্সিসের মতো বড় বড় দুর্নীতিতে শরিকদের বলি দিয়ে কংগ্রেসের মন্ত্রীরা রেহাই পেয়েছেন। কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারিতে সুরেশ কলমডী জেলে গেলেও সনিয়া গাঁধীর ‘মদতে’ বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় রয়েছেন শীলা দীক্ষিত। এ বারে কয়লা কেলেঙ্কারিতেই সব থেকে বড় সুযোগ এসেছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর। লোকসভা নির্বাচনের আগে এটি হাত থেকে ফস্কে যাক, বিজেপি নেতৃত্ব তা চাইছেন না।
তাই বদনামের ভাগীদার হয়েও বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাইছে কয়লা কেলেঙ্কারিকে। দলের শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলির কথায়, “প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। টুজি নিয়ে সংসদে অধিবেশন স্তব্ধ করে দেখা গিয়েছে, লাভই হয়েছে। বাকি দলগুলিই সিদ্ধান্ত নিন, তাঁরা দুর্নীতির পক্ষে না বিপক্ষে।” |