বিমার বাজারে প্রতিযোগিতার অস্ত্র বদলে যাচ্ছে। গ্রাহক ধরতে শুধু বিমার দাম নয়। জোর দেওয়া শুরু হয়েছে বিমা সংস্থার এজেন্টদের উপরেও। এজেন্টদের সংস্থার প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়ানোর মাধ্যমে গ্রাহক টানাকেই নতুন কৌশল হিসেবে দেখতে চাইছে রিলায়্যান্স লাইফ ইনশিওরেন্স-এর মতো সংস্থা।
রিলায়্যান্স-এর যুক্তি, সংস্থার উপর এজেন্টদের আস্থা বাড়লে তাঁরা গ্রাহকদের আস্থা কাড়তে পারবেন। সেই লক্ষ্যে এজেন্টদের সঙ্গে সংস্থার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও তাঁদের আয় বাড়ানো, এই দ্বিমুখী কৌশলকে কাজে লাগাতে চায় সংস্থাটি। আর সে জন্যই কমিশন ভিত্তিক এজেন্টদের পাশাপাশি বেতন দিয়ে স্থায়ী এজেন্টও নিয়োগ করতে চলেছে তারা।
বহু ক্ষেত্রে বিমাকারীদের প্রয়োজন ঠিক মতো না-বুঝেই এজেন্টরা বিমা করান বলে অভিযোগ। বিমা শিল্পের পরিভাষায় যাকে ‘মিস-সেলিং’ বলে। আবার অনেক সময়ে বিমা বিক্রির পর এজেন্ট সংশ্লিষ্ট সংস্থা ছেড়ে দেওয়ায় বিমাকারী সমস্যায় পড়েন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিমাকে ‘অরফ্যান পলিসি’ বলা হয়। বিমা শিল্পের হিসেবে, মোট বিমার ১৫-২০% পলিসিই এই রকম।
মিস-সেলিং বা অরফ্যান, এ ধরনের পলিসি সংখ্যায় রাশ টেনেই বিমাকারীর আস্থা বাড়াতে চায় রিলায়্যান্স লাইফ। সঙ্গী সংস্থা নিপ্পন জাপানে ‘জুট্টো মোট্টো’ নামে এ ধরনের পরিষেবা দিয়ে থাকে। যার অর্থ, বছরভর বাড়তি পরিষেবা। রিলায়্যান্স লাইফ-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর-প্রেসিডেন্ট মলয় ঘোষ জানান, সেই সূত্রেই ‘রিলায়্যান্স লাইফ প্লাস ক্লাব’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যেখানে সংস্থার প্রায় ১.৫ লক্ষ এজেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাদ দিয়েও বছরে অন্তত একবার বিমাকারীর প্রয়োজন ও চাহিদা বুঝতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। অরফ্যান পলিসি-র ক্ষেত্রে অন্য এজেন্টকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।
পাশাপাশি, অনেক সময়ে ঠিকানা বা অন্যান্য তথ্যে পরিবর্তন ঘটলেও বিমাকারীরা তা সংস্থাকে জানান না। ‘রিলায়্যান্স লাইফ প্লাস ক্লাব’ কর্মসূচিতে বিমাকারীদের সেই সব খুঁটিনাটি জেনে ব্যবস্থা নিতেও উদ্যোগী হবেন এজেন্টরা। মলয়বাবুর দাবি, এর ফলে সংস্থার প্রতি বিমাকারীর আস্থাও বাড়বে।
নিপ্পন জাপানে বেতন ভিত্তিক স্থায়ী এজেন্ট নিয়োগ করে। তাতে সংস্থার প্রতি এজেন্টদের দায়বদ্ধতাও বাড়ে। সেই অভিজ্ঞতা এ দেশেও কাজে লাগাতে চাইছে রিলায়্যান্স লাইফ। মলয়বাবু জানান, এ বছরে এ রকম সাড়ে পাঁচ হাজার বেতন ভিত্তিক ‘কেরিয়ার এজেন্ট’ নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি কমিশন ভিত্তিক আরও ৫০ হাজার এজেন্টও নিয়োগ করবে সংস্থা। দেশের প্রথম তিন বিমা সংস্থার তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার জন্য ব্যবসা বাড়াতে একাধিক কৌশল নিচ্ছে রিলায়্যান্স লাইফ। বিমা বেচতে ব্যাঙ্কের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধতে চায় সংস্থা। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৫% শেয়ার সঙ্গী ব্যাঙ্কগুলির জন্য বরাদ্দ করতে পারে তারা। চলতি অর্থবর্ষে নতুন ব্যবসা বাবদ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২,৩০০ কোটি টাকা। গত বছর তা ছিল ১,৮০০ কোটি টাকা। ২০১২-’১৩ সালে ৭টি নতুন প্রকল্প চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থার। |