সোনার চাহিদা কমেছে। কিন্তু তা থামাতে পারেনি দামের ঊর্ধ্বগতি। কলকাতার বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনা বা ২৪ ক্যারেট সোনার দাম শনিবার ঠেকেছে ৩১,৩০০ টাকায়। রাজধানী দিল্লির বাজারেও ছুঁয়েছে একই দর। ব্যবসায়ী মহল সূত্রে ইঙ্গিত, দাম আরও বাড়তে পারে।
সোনার দাম কতটা বাড়বে, তা অবশ্য মূলত নির্ভর করে বিদেশের বাজারের উপরই। আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সে দেশের হাল ফেরাতে আর এক দফা আর্থিক ত্রাণ প্যাকেজ আনতে চলেছে। এই খবরের জেরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার জেরই এসে পড়েছে ভারতের বাজারেও।
ভারতে দাম বাড়ার আর একটি কারণও রয়েছে। ২০১২-’১৩ সালের বাজেট পেশ করার সময়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সোনার আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে দেন। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২%। তা বাড়িয়ে ৪% করা হয়। তার ফলে সোনার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কারণ ছাড়াও শুল্ক বৃদ্ধি একটি গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করছে।
শুল্ক বাড়ানোর পিছনে প্রণববাবুর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, সোনা আমদানি কমানো। কিন্তু তাঁর সেই উদ্দেশ্য তেমন ভাবে সফল হয়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকে। কারণ, গয়নার বাজারে চাহিদা কমলেও গোল্ড ইটিএফে লগ্নির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা বাজারে গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ প্রকল্প ছেড়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সোনায় লগ্নি করতে পারেন। লগ্নিকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা দিয়ে ওই সব মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা সোনা কিনে রাখে।
সোনা লগ্নির এমনই একটি মাধ্যম, যার চাহিদা কমলেও বাড়ে দাম। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী গত আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বে সোনার চাহিদা কমেছে ৫%। ভারতে ৩%। কিন্তু তা সত্ত্বেও সোনার দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে।
শনিবার কলকাতায় পাকা সোনা প্রতি ১০ গ্রামে ১৪০ টাকা বেড়ে ছুঁয়েছে ৩১,৩০০ টাকা। দিল্লিতে তা ১৮৫ টাকা বেড়ে ওই একই অঙ্ক ছুঁয়েছে। কলকাতায় গয়নার সোনা ১৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৯,৬৯৫ টাকা। সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার ফলেই চাহিদা কিছুটা কমেছে। জেম অ্যান্ড জুয়েলাসি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের কর্তা পঙ্কজ পারেখ বলেন, “এক শ্রেণির মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে সোনা। বিশেষ করে আগে অনেকেই উপহার সামগ্রী হিসাবে সোনার গয়না কিনতেন। সেই বাজারটা অনেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। গয়নার ক্ষেত্রে দাম বাড়ার ফলে টাকার অঙ্কে বিক্রি কমেনি ঠিকই, কিন্তু আগের থেকে অনেক কম পরিমাণ সোনা লেনদেন হচ্ছে।” |