|
|
|
|
|
ভিজুক যত খুশি, আপনার কী! |
ভেজা হাওয়া মোটেই জলছাপ ফেলতে পারবে না এই বিশেষ আসবাবের শরীরে। তাই, বর্ষার দিনে জল
ঝরুক, বা না ঝরুক, খাসা থাকে বৃষ্টি-প্রুফ টেবিল-চেয়ার-দোলনারা।
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
বাদলা দিনে আপনার ঘরের বুঝি মন খারাপ? হবেই তো। দিনকয়েক ধরেই যে রোদ্দুর বয়কট করেছে। নেই সেই চেনা ফুরফুরে হাওয়াও। আপনি ভারী পর্দা সরিয়ে লেসের হালকা পর্দা লাগিয়েছেন, মেঝেতে জমকালো কাশ্মীরি কার্পেটের জায়গা নিয়েছে হালকা দরি, বাইরের গুমোট কাটাতে ঘরের আপহোলস্ট্রিতে এনেছেন রংবেরঙের ছোঁয়া। কিন্তু ঘরের আসবাবের দিকে যে মোটেও নজর করেননি। সাধের পালঙ্কে ময়েশ্চার লেগে পালিশ গিয়েছে চটে, বারান্দায় সাজিয়ে রাখা বেতের মোড়াগুলোর অবস্থাও তথৈবচ।
ভারী সমস্যা মনে হচ্ছে, তাই না? সমস্যাটা আসলে কিন্তু তেমন গুরুতর নয়। এখন এমন অনেক আসবাব পাওয়া যায়, যাকে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া মোটেই কাবু করতে পারে না। এমনকী, চাইলে ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যেও তাদের রেখে দিতে পারেন। প্রতি দিন টানাটানির ঝক্কি আপনাকেও ছুঁতেও পারবে না।
বারান্দায় বা ছাদের ওপর রাখা বাঁশ বা বেতের আসবাবদের বরং এই ক’মাস ছুটি দিন। প্রকৃতির বাদলা মেজাজের সঙ্গে এরা মানিয়ে নিতে পারে না মোটেই। এর বদলি হিসেবেই একটা সময় গার্ডেন ফার্নিচারের জন্য ব্যবহার করা হত কাস্ট আয়রন, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। কাস্ট আয়রনের বেঞ্চ, টেবিল দিয়ে সাজানো রয়েছে এখনও অনেক সাবেক বাড়ির লন। বাড়ির গাম্ভীর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক পাশে রাখা কাস্ট আয়রনের স্ট্যান্ড আলো করে থাকে পরী বা মানানসই ভাস্কর্য।
তবে কাস্ট আয়রনের ভারিক্কি ভাব যাঁদের মোটেই পছন্দ নয়, তাঁরা স্বচ্ছন্দে বেছে নিতে পারেন সিন্থেটিক উইকার। হালফিলের এই আসবাবের গায়ের বুনুনি অনেকটা বেতের মতোই, তবে বেতের সঙ্গে তফাৎটা হাত দিলে বোঝা যায়। একটু রুক্ষ ভাবই এই আসবাবের বৈশিষ্ট্য। ঝমঝমে বৃষ্টি বা মেঘভাঙা রোদ কোনও কিছুতেই নষ্ট হবে না এর চাকচিক্য। প্রধানত আউটডোর ফার্নিচার। কিন্তু বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া লন না থাকলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই। খোলা বারান্দা, বা ছাদের যে চেয়ার-টেবিলটিতে ঝকঝকে বিকেলে দু’জনে বসে কফির কাপে চুমুক দেন, তার দিব্যি বদলি হতে পারে কৃত্রিম এই তন্তু। বারান্দায় অর্ধচন্দ্রাকার বা হাতলবিহীন গোল চেয়ার (অনেকটা মোড়ার আদলে তৈরি) আর মাঝে ওভাল বা গোল সিন্থেটিক উইকার-এর তৈরি কফির টেবিল চমৎকার মানিয়ে যাবে। |
|
ছাদে বা লনে আটকানো বিশাল গার্ডেন আমব্রেলার তলায় বসার চেয়ারটিও হতে পারে এই মেটিরিয়াল-এ বানানো। টানা বারান্দায় রাখা দড়ির দোলনাটা তুলে ঝুলিয়ে দিতে পারেন এই উপাদানের তৈরি সুইং। দেদার বৃষ্টি মেখে দুলুন আপনি আর আপনার দোলনা, ক্ষতি কী হবে তার ভাবনাটা না হয় না-ই ভাবলেন।
তবে এই ধরনের আসবাব বাছার সময় দেখে নেবেন বেস-এ লোহা না অ্যালুমিনিয়াম কোনটি ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে ভাল হয়, অ্যালুমিনিয়াম বেস বেছে নিতে পারলে। কারণ, লোহার বেস হলে জলের ছাটে সহজেই মরচে পড়ে যেতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম হালকাও হবে, মরচে ধরার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু বেস কী দিয়ে তৈরি, সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বুঝবেন কী করে? খুব সহজ, ফার্নিচারের দোকানে যাওয়ার আগে ম্যাগনেট সঙ্গে রাখুন। মুহূর্তের মধ্যে বুঝে যাবেন। অ্যালুমিনিয়াম ভারী বর্ষা-বন্ধু ধাতু। বৃষ্টির ছাট আসার ভয়ে জানলার ধারে কোনও আসবাব রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না? শরণাপন্ন হতে পারেন অ্যালুমিনিয়ামের। এর তৈরি চেয়ারে বসে বৃষ্টি উপভোগ করুন প্রাণভরে।
বর্ষা-স্পেশাল ফার্নিচারের মধ্যে আমেরিকান পাইনের তৈরি আসবাবও ভারী জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক দিন লগ উড ফার্নিচার ফেলে রাখলে যে লুক আসে, আমেরিকান পাইনের আসবাবও অনেকটা সে রকমই দেখতে। এ-ও মূলত আউটডোর ফার্নিচার। তবে ব্যবহার করায় ঝক্কি কম বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনডোর ফার্নিচার হিসেবেও এগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বছরে এক বার, বর্ষার ঠিক আগে পেন্টজাতীয় এক ধরনের পালিশ এর ওপর লাগিয়ে দিতে হয়। এটি অনেকটা ছাতার মতো কাজ করে। বাইরের জল বা জলীয় বাষ্পকে সেঁধোতে দেয় না কাঠের খাঁজেখোঁজে। তাই বহু দিন ব্যবহার করা চলে। |
|
বর্ষায় আসবাবের দেখভাল |
যদি রাতারাতি অন্দরসাজ বদলানো সম্ভব না হয়? তা হলে একমাত্র উপায় আগাম কিছু ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন আসবাব যদি হয় প্লাইয়ের তৈরি, তা হলে অবশ্যই বর্ষা আসার আগেই এর ওপর মেলামাইন-স্প্রে বা ল্যাকার-স্প্রে লাগিয়ে নিন। এতে এর জল প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। বর্ষায় আসবাবের ওপর যে সাদা ছোপ ছোপ ফাঙ্গাস দেখা যায়, তার হাত থেকেও রেহাই মিলবে। লেদারের তৈরি জিনিসের ক্ষতি ঠেকাতে অবশ্যই ব্যবহার করুন লেদার ক্লিনিং কিট। চামড়ার তৈরি আসবাবের ওপর এই উপাদান অনেকটা ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। তবে, ময়েশ্চার লেগে যাওয়ার ভয়ে কখনও অনেক দিন ঘর বন্ধ রেখে দেবেন না যেন। আসলে, বদ্ধ ঘরে ফার্নিচারের ওপর ঘাম জমে। এটা কিন্তু ফার্নিচারের ক্ষতি-ই করে। তাই মাঝেমধ্যেই দরজা-জানলা খুলে হাওয়া ঢুকতে দিন ঘরে। |
|
|
|
|
|
|