চিকিৎসার গাফিলতিতে তিন মাসের শিশু মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বর। শুক্রবার সকাল নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ওই অভিযোগে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চলে। হেনস্থার চেষ্টা হয় চিকিৎসকদেরও। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পুরসভার চেয়ারম্যান। মহকুমাশাসককে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, “হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা জানতাম না। মহকুমাশাসককে বলছি বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে।” পুলিশ জানায়, মৃত শিশুর নাম মহম্মদ রিধান। বাড়ি ইসলামপুর থানার ডিমরুল্লার বিজুখোড় এলাকায়। গত ২০ অগস্ট নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রিধানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। শিশুর পরিবারের অভিযোগ, এ দিন সকালে মা সাহিন পারভিন বাইরে গেলে কর্তব্যরত এক নার্স শিশুটিকে ইঞ্জেকশন দিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটি মারা যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ছুটে যান। অভিযোগ, এর পরে শুরু হয় বিক্ষোভ, ভাঙচুর। চিকিৎসকদের মারধরের চেষ্টাও হয়। আতঙ্কে শিশু বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা অন্যত্র চলে যান। তাণ্ডব চলে প্রসূতি বিভাগেও। খবর পেয়ে পিুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” এ দিন হাসপাতালে ছুটে যান ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল। তিনি রোগীর বাড়ির লোককে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে মৃত শিশুর বাড়ির লোক থানায় হাসপাতালের শিশু-রোগ বিশেষজ্ঞ আশিস দাশগুপ্ত ও এক নার্সের নামে চিকিৎসায় গফিলতির অভিযোগ করেন। আশিসবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। বাইরে ওই শিশুটিকে আমি কয়েক বার চিকিৎসা করেছি। হাসপাতালে আমার অধীনে ভর্তি হয়নি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুকে কফ জমে যাওয়ায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুর দাদু নেসার আলি বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি করানোর আগে রিধানকে প্রথমে চিকিৎসক আশিস দাশগুপ্ত দেখেন। চিকিৎসায় সাড়া না দেওয়ায় ওকে হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক সিদ্ধর্থ মজুমদারের কাছে নিয়ে যাই। তাঁর পরমর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত নার্স একটা ইঞ্জেকশন করার পরে আমার নাতি মারা যায়।” হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার আবদুস সামস যদিও মৃত শিশুর পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “চিকিৎসক বা নার্সিং স্টাফের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। শিশুটিকে যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে সেটা ভর্তির পর থেকে চলছিল।” যদিও তিনি জানান, শিশুর পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। এর পাশাপাশি হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অন্য এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “শিশুটির অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ মারা যায়।” |