সরকারি নোটিশের শর্ত মানলে তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবেন পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ঠিকাদারেরা। তাই নিজেরাই সভা ডেকে পছন্দের ঠিকাদারদের নাম তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত পদাধিকারীরা। এমনই অভিযোগ উঠেছে সিপিএম পরিচালিত জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। তবে শুধু সিপিএম নয়, সভার সিদ্ধান্তে সই করেছেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতাও।
জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতির ঠিকাদারদের তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। সরকারি ভাবে নোটিশও ঝুলিয়ে দেন সমিতির কার্যকারী আধিকারিক তথা বিডিও. ঠিকাদারদের আবেদনের ভিত্তিতে খসড়া তালিকাও তৈরি হয়। সরকারি নোটিশ অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকায় তালিকায় বেশ কিছু পুরোনো ঠিকাদারদের স্থান হয়নি। তার পরেই যাবতীয় বির্তকের সূত্রপাত বলে অভিযোগ।
গত ১২ জুলাই পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডাকা হয়, এই কমিটিই তালিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সেই বৈঠক বিডিও উপস্থিত ছিলেন না। সেই বৈঠকেই এমন ১১ জন ঠিকাদারদের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যাদের সরকারি নির্দেশিত যোগ্যতা নেই বলেই অভিযোগ। তাদের যে যোগ্যতা নেই তাও সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১২ জুলাইয়ের সভার বিবরণীতে লেখা হয়েছে, যাদের সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হওয়ার ঘাটতি রয়েছে, তাদের নাম অনুমোদন করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশ এড়িয়ে কেন তাদের নাম অনুমোদন করা হল? সভার কার্যবিবরণীতে তাও লেখা রয়েছে, যারা বিগত দিনে সমিতির বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাহায্য করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত সমিতির কাজের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে যুক্ত ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাদের যথেষ্ঠ অভিঞ্জতা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এখানেই. সরকারি শর্ত অনুযায়ী য়ে ঠিকাদারদের নথিভুক্ত হওয়ার যোগ্যতাই নেই তাদের সম্পর্কে সরকারি সভার কার্যবিবরনীতেই ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার মতো এমন দরাজ প্রশংসা করা যায়? পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী সমিতির এমন সিদ্ধান্ত ও তার সপক্ষে যুক্তিতে কার্যত চমকে উঠেছেন প্রশাসনের কর্তারা। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পডেছে. সরকারি নির্দেশ না মেনে ইচ্ছেমতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না. রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সদর পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি অমূল্য রায় বলেন, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হয়নি। সভায় বিডিও উপস্থিত ছিলেন না। তাই বলে দেওয়ার কেউ ছিল না। যদি প্রয়োজন হয় তবে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।” সমিতির বিরোধী দলনেতাও তার পছন্দের ঠিকাদারদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন সভার কার্যবিবরনীতে। কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা হীরালাল রাউত বলেন, “আইনত হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কিন্তু গ্রামের ছেলেদের বেশি করে কাজ দিয়ে স্বনির্ভর করা হোক, এই বিবেচনা করেই কিছু নাম সুপারিশ করেছিলাম।” সদর ব্লকের বিডিও মল্লিকা সেনগুপ্ত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। গত তিন বছর ধরে সদর পঞ্চায়েত সমিতিতে ঠিকাদারদের তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। বার দু’য়েক নোটিস দিয়েও পরে প্রক্রিয়া থমকে যায়। অভিযোগ, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেই এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখা হয়। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “কেমন নীতিহীন ভাবে সিপিএম তাদের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতি চালাচ্ছে, এটাই তার প্রমাণ। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।” |