চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনার নাম করে ফরওয়ার্ড ব্লকের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রী বলেন, “সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। ২০১০ সালে আলু কেনা নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা মুখ্যন্ত্রীকে জানাব। বিষয়টি নিয়ে যেন সংশ্লিষ্ট দফতর তদন্ত করে তাও দেখা হবে।” ঘটনাটি নিয়ে রাজ্য কমিটিকে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে ফরওয়ার্ড ব্লকের আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক জেলা কমিটি। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে অভিযোগকারী দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধেও। সম্প্রতি ফরওয়ার্ড ব্লকের আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য অলোক রায় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায় ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখেন। চিঠি প্রকাশ্যে আসতে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রীতিমত বিপাকে পড়েন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হয়ে তাঁদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এ ভাবে ফেসবুকে অভিযোগ জানানো ঠিক হয়নি। দলের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহ বলেন, “নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা দলকে জানানো উচিত ছিল।” যাঁর অভিযোগ নিয়ে এত হইচই তিনি দলীয় কর্মী কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন উদয়নবাবু। তিনি বলেন, “অভিযোগকারী দলীয় কর্মী কিনা তা আগে দেখা হবে। দলীয় কর্মী হলে বিষয়টি দলে জানানো উচিত ছিল। উনি সেটা না করে যে কাজ করেছেন সেটা দলবিরোধী। বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা হবে।” কিন্তু গোবিন্দবাবু ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে দল তদন্ত করবে কিনা সে বিষয়ে তিনি মুখ খোলেননি। দলের আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করুণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অলোক দলের জেলা কমিটির সদস্য। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ওঁর চিঠি নিয়ে জেলা কমিটিতে আলোচনা হবে। অলোকের অবস্থান এবং তাঁর অভিযোগ দুটোই রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।” অলোকবাবু অবশ্য বলেন, “কয়েকবার দলকে দুর্নীতির কথা জানিয়ে লাভ হয়নি। নিরুপায় হয়ে ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছি।” যদিও দলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায় ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অলোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ওই কাজ করছে। প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে ওই সময় সমবায় সংস্থা ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার আছে। তাঁরা ঘটনাটির তদন্ত করলে সব স্পষ্ট হবে।” অলোকবাবু অভিযোগ, ২০১০ সালে আলুর বেশি ফলন হওয়ায় অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ দফতর জলপাইগুড়ির একটি সমবায় সংস্থাকে আলু কেনার ভার দেয়। সমবায়ের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন তদানীন্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক গোবিন্দ রায়ের স্ত্রী সবিতা দেবী। সমবায় সংস্থাটি যে সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয় তার সভাপতি ছিলেন গোবিন্দবাবু স্বয়ং। আলু কেনার যে নথি সমবায় সংস্থার তরফে জমা দেওয়া হয় সেখানে গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ। |