পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় বিচারপতি
থানা অকেজো হলে
এসপির তলব পড়বে রোজই
থানার ওসি-সহ অফিসার ও কর্মীরা যদি গয়ংগচ্ছ ভাবে চলেন, তা হলে পুলিশের পদস্থ কর্তাদের আদালতে তলব করতেই হবে। যদি দেখা যায়, নিচু তলার পুলিশকর্মী থেকে অফিসার পর্যন্ত সকলেই নিষ্ক্রিয়, মানুষ থানায় গিয়ে সহযোগিতা পাচ্ছেন না, তা হলে হাইকোর্ট প্রতিদিনই জেলার পুলিশ সুপারদের তলব করতে বাধ্য।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায় শুক্রবার এই মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে বলে দিয়েছেন, পুলিশ যদি মানুষকে সাহায্য না-করে, আদালতের নির্দেশে পুলিশ যদি হাজির না-হয়, পুলিশ সুপারদের বারবার হাইকোর্টে তলব করা হবে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেলের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবারেই নির্দেশ দিয়েছে, ৩০ অগস্ট উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারদের আর ৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে হাইকোর্টে হাজির হতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জেলা পুলিশ নিষ্ক্রিয় ও উদাসীন এবং তাঁরা সেই নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার প্রতিকার করতে পারছেন না। প্রায় একই ধরনের অভিযোগে শুক্রবার দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগকে তলব করেছিলেন বিচারপতি অসীম রায়।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার এ দিন সকাল ১০টাতেই হাইকোর্টে হাজির হন। বিচারপতি সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানির সময় তাঁকে বলেন, পুলিশ সুপারদের কাজ ব্যাহত করে হাইকোর্ট পারতপক্ষে তাঁদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে চায় না। কিন্তু যখন দেখা যায়, দিনের পর দিন বিভিন্ন রিপোর্ট চেয়ে জেলা পুলিশের কাছ থেকে কোনও সাড়া মিলছে না এবং তার ফলে মামলা বিলম্বিত হচ্ছে, অভিযুক্তেরা জামিন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, উচ্চ আদালত তখন পুলিশ সুপারদের ডেকে পাঠাতে বাধ্য হয়। আর এমন ঘটনা যদি ঘটেই চলে, তা হলে তো বারংবার হাইকোর্টে ডাকতে হবে পুলিশ সুপারদের।
পুলিশের অকর্মণ্যতার জন্য কিছু দিন আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দাকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করেছিল হাইকোর্ট। তার পরেও কলকাতা বা রাজ্য পুলিশে গদাইলস্করি চাল যে অব্যাহত, পরের পর পুলিশ সুপারদের ডেকে পাঠানোর ঘটনাতেই সেটা প্রমাণিত। এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে তলব করা হয়েছিল। সেই মামলায় পুলিশের গাফিলতিটা কোথায়?
ওই মামলায় আবেদনকারীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানা এলাকার গোপালনগরের গৃহবধূ লিপি শীল (৩৩) অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন দিন পরে তিনি মারা যান। পুলিশ এর মধ্যে গৃহবধূর জবানবন্দিও নথিভুক্ত করে।” লিপিদেবীর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তপন থানার আইসি-কে মৃতার জবানবন্দি আদালতে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তপন থানার আইসি বা অন্য কোনও অফিসার আদালতে আসেননি, রিপোর্টও জমা দেননি। বারবার হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ পাঠানো সত্ত্বেও ওই থানার তরফে কোনও জবাবও পাঠানো হয়নি। এই অবস্থায় ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং পুলিশ সুপারকে ওই রিপোর্ট নিয়ে শুক্রবার হাইকোর্টে হাজির হতে বলে।
পুলিশ সুপার এ দিন রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে বলেন, ছেলেকে পড়ানো নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়েছিল। তিনি রাগের বশে নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। জবানবন্দি থেকে আদালতের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ভয় দেখিয়ে আসল রিপোর্ট চেপে রেখে পুলিশ তাঁদের হেনস্থা করছিল। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনকারীদের আগাম জামিন মঞ্জুর করে।
এই ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তনবাবু বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। তাই বিশদ ভাবে কিছু বলতে পারব না। এটুকু বলতে পারি, সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.