|
|
|
|
অভিযোগ, হিসেব নেই |
যৌথ উদ্যোগের আবাসনে বিশেষ অডিট করছে রাজ্য |
প্রভাত ঘোষ • কলকাতা |
সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একের পর এক আবাসন। অথচ যৌথ সংস্থাগুলির লাভক্ষতির কোনও হিসেব রাজ্য আবাসন পর্ষদের কাছে নেই! বাম আমলে তৈরি হওয়া এই সব যৌথ উদ্যোগের আবাসন সংস্থার হিসেবপত্র খুঁটিয়ে দেখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অর্থ দফতরকে দিয়ে ‘বিশেষ অডিট’ শুরু করেছে। একই সঙ্গে আবাসন পর্ষদে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্যও বিশেষ অডিট করছে রাজ্য সরকার। অভিযোগ উঠেছে, পর্ষদের বিভিন্ন কর্মী বিভিন্ন কোটায় কম দামে পাওয়া ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও, দীর্ঘদিন ধরে নানা অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগও নতুন সরকার খতিয়ে দেখবে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আবাসন প্রকল্প তৈরির জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৮-এর অগস্ট পর্যন্ত বাম আমলের ১৫ বছরে মোট ন’টি যৌথ উদ্যোগ সংস্থা এবং চারটি সহযোগী সংস্থা তৈরি হয়। আবাসন পর্ষদের সঙ্গে প্রথম চুক্তিটি (মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) হয় পিয়ারলেস ও অম্বুজা গোষ্ঠীর সঙ্গে, ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। তার পর একে একে চুক্তি হয় প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পুত্র শুভব্রত (চন্দন) বসুর কোম্পানি ‘গ্রিনফিল্ড’, তোদি গোষ্ঠীর ‘শ্রাচী’, সমর নাগের ‘শেল্টার’, প্রদীপ সুরেকাদের ‘পার্ক চেম্বার্স’ ইত্যাদি কোম্পানির সঙ্গে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, “প্রথমে ৬টি যৌথ উদ্যোগের সংস্থায় বিশেষ অডিট করানো হচ্ছে। এ সব সংস্থায় সরকারের অংশীদারি আছে বলেই হিসেবপত্র খুঁটিয়ে দেখা দরকার হয়ে পড়েছে।” পরে আরও তিনটি সংস্থায় বিশেষ অডিট করানো হবে বলে অর্থ দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
আবাসন দফতরের এক মুখপাত্রের অভিযোগ, “যৌথ উদ্যোগের সংস্থাগুলিতে সরকারের প্রতিনিধিরা ছিলেন। কিন্তু কোনও সংস্থারই হিসেব-নিকেশ পর্ষদে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! এই সব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আবাসিকদের বহু অভিযোগও জমা পড়েছে পর্ষদের কাছে। তাই অর্থ দফতরকে দিয়ে অডিট করানো হচ্ছে। কোম্পানিগুলির বোর্ডে আগের সরকারের প্রতিনিধিদেরও বদলানো হয়েছে।” মহাকরণের খবর, আপাতত ৬টি সংস্থায় বিশেষ অডিট শুরু হয়েছে। এ গুলি হল, বেঙ্গল গ্রিনফিল্ড, বেঙ্গল পিয়ারলেস, বেঙ্গল শেল্টার, বেঙ্গল অম্বুজা, বেঙ্গল শ্রাচী ও বেঙ্গল পার্ক চেম্বার্স।
বাম আমলে এ ধরনের বিশেষ অডিট কখনও না-হলেও যৌথ উদ্যোগের অংশীদার বেসরকারি সংস্থাগুলির কোনও কর্তাই এতে আপত্তি জানাননি। বেঙ্গল পিয়ারলেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কুমারশঙ্কর বাগচি বলেন, “আমাদের যৌথ সংস্থায় সরকারের প্রতিনিধি রয়েছেন। হিসেবপত্র পরীক্ষা করে দেখার অধিকারও তাঁদের আছে। এত দিন এ সব দেখা হয়নি। কিন্তু আমাদের কোনও লুকোছাপা নেই।” নতুন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কার্যত সমর্থনই করেছেন বেঙ্গল গ্রিনফিল্ডের এমডি শুভব্রত বসু। তাঁর কথায়, “নতুন সরকার এসেছে। তারা তো দেখবেই আগের সরকারের আমলে কী কী হয়েছে। তা ছাড়া, এই সংস্থায় সরকারের পঞ্চাশ শতাংশ শেয়ার আছে। তারা হিসেবপত্র দেখতেই পারে।” একই মত বেঙ্গল শেল্টারের এমডি সমর নাগের। তিনি বলেন, “সরকার যে হেতু অংশীদার, নিজের কোম্পানির হিসেবপত্র দেখতেই পারে। আমরা আপত্তি করব কেন?” সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছে বেঙ্গল অম্বুজা। সংস্থার এমডি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া বলেন, “সরকার আমাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। জানিয়েছি। কোম্পানির ‘ব্যালান্স শিট’ আবাসন পর্ষদকে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও সরকার চাইলে বিশেষ অডিট করুক।” বেঙ্গল পার্ক চেম্বার্সের এমডি প্রদীপ সুরেকা বলেন, “সাত-আট বছর ধরে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। বিশেষ অডিটে আপত্তি নেই।” রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে সংস্থায় নতুন পরিচালন বোর্ড হয়েছে জানিয়ে বেঙ্গল শ্রাচীর কর্তা রাহুল তোদি বলেন, “আমাদের হিসেব-নিকেশ আবাসন পর্ষদকে দেওয়া আছে। ডিভিডেন্ডও দেওয়া হয়েছে। এমনকী বিধানসভাতে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার উত্তর সরকারকে জানিয়েছি। ফলে অডিট করতে চাইলে করুক।”
পর্ষদের অভিযোগ, এই সব সংস্থায় সরকারের সমান অংশীদারিত্ব থাকলেও কর্মী নিয়োগে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই। আবার, প্রকল্প তৈরির আগে ফাঁকা জায়গা, সবুজায়ন, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের মতো যে সব প্রতিশ্রুতি ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তা রক্ষা করা হয়নি। যেমন, প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোড ও বাইপাসের কানেক্টর, নিউটাউনের মতো জায়গায় পানীয় জল সরবরাহের আগাম ব্যবস্থা না-করেই ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে। অনেক আবাসিক কমিটি আবার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলাও করেছেন। ওই মুখপাত্রের কথায়, “আবাসন প্রকল্পগুলিতে সরকার জড়িত দেখে লোকে বিশ্বাস করে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কোম্পানিগুলির পরিচালন বোর্ডে সরকারি প্রতিনিধিদের কোনও ভূমিকাই ছিল না।” অডিটে এ সব কিছুই খতিয়ে দেখা হবে।
|
ওয়েবসাইট আবাসনেও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আবাসন দফতরের কাজে স্বচ্ছতা আনতে নতুন ওয়েবসাইট চালু হল। যে-কেউ ওই সাইট থেকে দফতরের যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শুক্রবার ওই ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। ছিলেন আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। অর্থমন্ত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। দফতরগুলির কাজে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে, সেই ব্যাপারে কড়া নির্দেশ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেই উদ্দেশ্যেই আবাসন দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করা হল। |
|
|
|
|
|