দুপুর থেকেই বিধাননগর স্টেশন এলাকায় ঘুরঘুর করছিলেন পাঁচ ফেরিওয়ালা। খবর ছিল, কখন কোন ট্রেনে আসবে দুই ‘টার্গেট’। ‘টার্গেট’রা প্ল্যাটফর্মে পা দিতেই ফেরিওয়ালাদের নজরে পড়ল তাঁদের কাঁধের চামড়ার দামি ব্যাগ দু’টোয়। খবর ঠিক হলে তাতেই রয়েছে কোটি টাকার মাল। যে যার মতো ‘টার্গেট’দের পিছু নিলেন।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ ধরে দুই যুবক ইতিমধ্যে জোরে হাঁটতে শুরু করেছেন উল্টোডাঙ্গা ফুটব্রিজের দিকে। ব্রিজে না উঠে ‘টার্গেট’রা যখন দুর্গাপুর ব্রিজ (উল্টোডাঙ্গা ব্রিজ)-এর দিকে বাঁক নিলেন, তখন গতি বাড়ালেন ফেরিওয়ালারাও। ব্রিজে না উঠে বাঁ দিকের রাস্তায় ঢুকলেন দুই যুবক। ততক্ষণে তাঁরা বুঝে গিয়েছেন যে, পাঁচ ফেরিওয়ালা পিছু নিয়েছেন। কিন্তু বাঁচার পথ খোঁজার আগেই ফেরিওয়ালাদের খপ্পরে পড়ে গেলেন যুবকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ভাবেই ফেরিওয়ালার বেশে আন্তর্জাতিক মাদকচক্রে জড়িত অভিযোগে দুই নাইজিরীয়কে গ্রেফতার করলেন কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের নার্কোটিকস শাখার পাঁচ কর্মী। ওই যুবকেরা ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে নিজেদের ‘ফুটবলার’ বলে দাবি করেও শেষরক্ষা হল না। ব্যাগ থেকেই বেরোল ১০২ গ্রাম কোকেন। তার আনুমানিক বাজারমূল্য এক কোটি টাকা। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ধৃত এজিনওয়া জুড চিকিজি ও কেনেথ উদোকা অ্যানোজি ফুটবল খেলার ভিসা নিয়ে এ দেশে আসেন। এক বছর আগেই তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাদের কাছে মিলেছে ৪টি মোবাইল, তিনটি বিদেশি সিম কার্ড, জাল পাসপোর্ট এবং নগদ ৫৪ হাজার টাকা।
পুলিশ জানায়, জুডের বাড়ি যাদবপুরে, কেনেথ তিলজলার বাসিন্দা। তাঁদের মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখে পুলিশ জানতে পারে, ক্রমাগত ‘সিম’ বদলাচ্ছেন তাঁরা। কলকাতায় তাঁরা মুম্বেইর ‘সিম’ ব্যবহার করতেন, সেকেন্দ্রাবাদে গোয়ার আর গোয়ায় কলকাতার।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি কলকাতায় আসেন তাঁরা। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ২৩ অগস্ট কারও কাছে কোকেন বিক্রি করতে যাবেন তাঁরা। ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশ নেন নার্কোটিকস শাখার পাঁচ অফিসার ওসি মৃগাঙ্কমোহন দাস, সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্ত বিশ্বাস, প্রশান্ত দাস ও অপু বৈদ্য। ‘টার্গেট’রা যে যাদবপুর থেকে শিয়ালদহ হয়ে বিধাননগরে যাবেন, জানা ছিল তা-ও। বৃহস্পতিবার বিধাননগর স্টেশনে ছিলেন পাঁচ ‘ফেরিওয়ালা’। জুড ও কেনেথের পিছনে ‘লোক’ লাগানো হয় যাদবপুর থেকে। ধৃতদের জেরা করে অন্য ‘এজেন্ট’দের খোঁজ করছে পুলিশ। |