কাজ দেওয়ার নাম করে ভিন্ রাজ্যের তরুণীকে ভরসন্ধ্যায় পানশালায় নিয়ে গিয়েছিল এক যুবক। তার পরে কলকাতার নানা প্রান্তে ঘুরিয়ে এক নির্জন গলিতে নিয়ে গিয়ে সে-ই তাঁকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বেনিয়াপুকুর এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শিয়ালদহ স্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করা কয়েক জন যৌনকর্মীর মাধ্যমেই ওই তরুণীর সঙ্গে যুবকের আলাপ হয়েছিল। তরুণীর দেওয়া বর্ণনার ভিত্তিতে শুক্রবার বেশি রাতে মিন্টু হোড়া ওরফে এক্রামুল আলি নামে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মা-বোনেদের অসম্মান করতেই কেউ কেউ অপপ্রচারের চক্রান্ত করছেন। আমি সব সময়েই বলি, ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নিন। অহেতুক মাতৃজাতির অসম্মান করবেন না।”
কী ঘটেছিল বেনিয়াপুকুরে?
পুলিশ জানায়, অভিযোগকারিণী তরুণী মুম্বইয়ের বাসিন্দা। সপ্তাহ দুয়েক আগে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসেন তিনি। তরুণী পুলিশকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে মিন্টুর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। ওই যুবক তাঁকে কাজ দেবে বলে হাওড়ার একটি পানশালায় নিয়ে যায়। পরে সে তাঁকে নিয়ে যায় তপসিয়ার একটি বাড়িতে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় বেনিয়াপুকুরের লেডিজ পার্কে। তরুণীর অভিযোগ, রাত ৩টে নাগাদ লেডিজ পার্কের পাশে একটি কানা গলিতে ঢুকিয়ে তাঁকে দু’বার ধর্ষণ করে মিন্টু। তরুণী অচৈতন্য হয়ে পড়লে যুবকটি চম্পট দেয়।
শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার ধারে ওই তরুণীকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশকে তরুণী জানান, ওই যুবক তাঁকে ঠান্ডা পানীয় খেতে দিয়েছিল। খেয়েই তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এ দিনও উদ্ধারের সময় তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। হাসপাতালে শুশ্রূষার পরে কিছুটা সুস্থ হলে পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে।
পুলিশ জেনেছে, কাজের সন্ধানেই ওই তরুণী কলকাতায় এসেছিলেন। আক্রায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজও করতেন তিনি। দু’তিন দিন আগে তিনি আত্মীয়ের বাড়ি ছেড়ে ঘুরতে ঘুরতে শিয়ালদহ স্টেশনে যান। সেখানেই থাকতেন। তদন্তকারীরা জানান, শিয়ালদহ স্টেশনে কয়েক জন যৌনকর্মীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরাই মিন্টুর সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় করিয়ে দেন। ব্যাপক ঘোরাঘুরির পরে মিন্টু কাজ দিতে পারবে না বলে তাঁকে জানায়। গভীর রাতে মিন্টু তাঁকে বেনিয়াপুকুরের কানা গলিতে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। শুক্রবার তরুণীকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। পরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাতে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে রাখা হয় তাঁকে।
কী ভাবে ধরা পড়ল মিন্টু?
তরুণীর অভিযোগ পেয়ে সৌগত পাল, নজরুল ইসলাম ও গৌতম দাস নামে তিন কর্মীকে নিয়ে দল গড়ে তদন্তে নামে বেনিয়াপুকুর থানা। ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় রাতে জানান, তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ঘোরাঘুরির সময় ওই যুবক বারবার মোবাইলে কথা বলতে বলতে নিজের নাম এবং ‘আমার মতো বড় ডাকাত’ কথাটি বলছিল। তদন্ত-দল নথি ঘেঁটে জানতে পারে, ওই নামে সত্যিই এক জন কুখ্যাত ডাকাত আছে। তদন্তকারীরা স্থানীয় সূত্রে সেই মিন্টুর একটি মোবাইল নম্বর পান এবং জানতে পারেন, মিন্টু প্রায়ই এন্টালির মিডল রো-তে একটি পানশালায় যায়। ওই নম্বরে ফোন করে টাওয়ার পাওয়া যায় এন্টালিরই। কিন্তু ওই পানশালায় মিন্টুকে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে বেরিয়ে ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে ওই রাস্তাতেই মিন্টুকে পেয়ে যান তদন্তকারীরা। ডিসি জানান, তরুণীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে ধৃতের চেহারা মিলে যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ‘ডাকাত মিন্টু’ই অভিযুক্ত মিন্টু।
এই অবস্থায় এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে মা-বোনেদের অসম্মানের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরোক্ষে সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, “খুন-ধর্ষণ-অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সারা দিন ধরে ব্যাখ্যা চলছে। নেতিবাচক বিষয় আমার ভাল লাগে না। যা ইতিবাচক, গঠনমূলক, সৃষ্টিশীল, তা নিয়ে চর্চা করুন।” |