মালদহে মামলা প্রতারিত দম্পতির
ভুয়ো রিপোর্টে টাকা হাতানোর চেষ্টা
বেসরকারি প্যাথলজি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগসাজশে এক বধূকে অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে দেখিয়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে গর্ভপাত করানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। মালদহের হবিবপুর থানার বুলবুলচণ্ডী আর এন রায় গ্রামীণ সরকারি হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। বধূটির স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দিতে চান। কিন্তু, চল্লিশের কোঠায় থাকা বধূটি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করান। সেখানে দেখা যায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা নন। তার পরেও স্বামীর নির্দেশে একাধিক বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তাঁর গর্ভে যে কোনও সন্তান নেই সেই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হন। অভিযোগকারিণী বধূর অভিযোগ, সব জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে চায়নি। তাই বধূটি মালদহ জেলা আদালতে সব জানিয়ে মামলা দায়ের করেন। বুধবার মালদহের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পীযূষ কুমার দাস পুলিশকে ওই চিকিৎসক ও বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করে ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা রজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ কেউ করেছে বলে মনে পড়ছে না। যদি কেউ অভিযোগ জানিয়ে থাকেন তবে সেটা গুরুত্ব সরকারে দেখা হবে।” হবিবপুর থানার আই সি আত্রেয়ী সেন জানান, ওই ধরনের অভিযোগ কেউ আগে থানায় জানাতে যাননি। আইসি বলেন, “আদালতের নির্দেশ হাতে এলেই মামলা করব।” অভিযুক্ত চিকিৎসক সুকান্ত কর্মকার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এটা সাজানো কেস। কেউ আমাকে বদনাম করতে চাইছে।’’ মালদহের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনোজ সাহা বলেন, “এই ঘটনাটি আমি শুনিনি। যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা মারাত্মক। হবিবপুরের বিএমওএইচের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছি।” আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হবিবপুরে কানতুর্কার চকসাপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই বধূ আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামী ৬ মাস আগে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ইদানীং শরীর দুর্বল লাগায় তিনি প্রতিবেশী এক জনকে নিয়ে ২৭ মে বুলবুলচণ্ডী হাসপাতালে ডাক্তার সুকান্ত কর্মকারের কাছে দেখাতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ডাক্তার আমাকে জানান, পেটে ৪ মাসের বাচ্চা আছে। আমি বলি, ডাক্তারবাবু আপনি ঠিক বলছেন না। আমার স্বামী ৬ মাস হল বাড়িতে নেই। কী ভাবে আমার পেটে বাচ্চা আসবে?” কিন্তু, চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের সামনের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মূত্র পরীক্ষা করাতে পাঠান। ৩ ঘণ্টা পরে মূত্র পরীক্ষার রিপোর্ট মেলে। বধূর অভিযোগ, “রিপোর্ট নিয়ে যেতেই ওই চিকিৎসক চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি বলেছিলাম তোর পেটে বাচ্চা আছে। দেখ রিপোর্টও বলছে তোর পেটে বাচ্চা আছে। পর পুরুষের সঙ্গে সহবাস করবি আর পেটে বাচ্চা এলেই বলবি স্বামী বাড়িতে থাকে না, বাচ্চা কি করে এল?” এর পরেই তাঁকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে গর্ভপাত করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দু’দিন পরে বধূর স্বামী গণেশবাবু জানতে পেরে বাড়িতে পৌঁছে স্ত্রীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। বধূটির কথায়, “আমার স্বামী আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছিল না। দুশ্চরিত্র অপবাদ দিয়ে মারধর করে। পরে আমি স্বামীকে বলি, অন্য জায়গায় আমাকে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানো হোক। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে চিকিৎসককে দেখানো হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, পেটে কোনও বাচ্চা নেই।” মালদহ শহরের একাধিক বেসরকারি নার্সিংহোমে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করান দিনমজুর গণেশবাবু। এ দিন গণেশবাবু বলেন, “ওই চিকিৎসক ও ক্লিনিকের যোগসাজশে আমার স্ত্রীকে গর্ভবতী বলে ৩০০০ টাকা নিয়ে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমার স্ত্রী হবিবপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।” অভিযোগকারিণী বলেন, “সে দিন চিকিৎসকের প্রস্তাবে রাজি হলে আমাকে স্বামী দুশ্চরিত্রা বলে তাড়িয়ে দিতেন। ওই চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।” অভিযুক্ত ক্লিনিক মালিক লীন্দর সিংহ বলেন, “আমি যা নমুনা পেয়েছি সেই রিপোর্ট দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” অভিযোগকারিণীর আইনজীবী শৈবাল মৈত্রের অভিযোগ, “বুলবুলচণ্ডী আরএনরায় হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের নামে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে গর্ভপাত করিয়ে টাকা রোজগার করার অভিযোগ আছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.