পাভলভ
বরাদ্দ অনুযায়ী খাবার মেলে না মনোরোগীদের
ঠিক যেন ‘আমরা-ওরা’!
বাকি সবাই পাচ্ছে, শুধু ওঁরা পাচ্ছেন না। বাকিদের বরাতে বেশি ভাত, বড় মাছের টুকরো, বেশি সব্জি। আর ওঁরা পাচ্ছেন ট্যালট্যালে জলের মতো ডাল, কুমড়োর ঘ্যাঁট, কাঁটা সর্বস্ব মাছ। মাসের পর মাস এই বৈষম্যের ছবিই খাস কলকাতার এক মানসিক হাসপাতালে। আদালতের নির্দেশে রাজ্যের সমস্ত মানসিক হাসপাতালে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। গত তিন মাস ধরে সেই বর্ধিত দামেই খাবার মিলছে। কিন্তু টেন্ডার-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় খাস কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে এখনও বর্ধিত দাম চালু হয়নি। ফলে পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যের অন্যতম প্রধান এই মানসিক হাসপাতালের রোগীরা।
লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালে ২০০২ সাল থেকে রোগী প্রতি দৈনিক খাবারের দাম ছিল ৩২ টাকা ৩০ পয়সা। ২০০৮ সাল থেকে তা বেড়ে হয় ৩৭ টাকা ১৮ পয়সা। কিন্তু বাজারদর যে হারে বাড়ছে, তাতে ওই দামে চার বেলার খাবার সরবরাহ করা সম্ভব নয় জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে খাবার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা। আদালত জানিয়ে দেয়, সরকার যে টাকা দেয়, তাতে চার বেলার খাবার দেওয়া অসম্ভব। অবিলম্বে দাম বাড়িয়ে রোগী পিছু দৈনিক ৬০ টাকা ৫২ পয়সা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পর থেকে ওই দামেই খাবার দেওয়া হচ্ছে লুম্বিনীতে। বহরমপুরে সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থা ৪০ টাকায় খাবার দিতে অস্বীকার করায় সেখানে মাস তিনেক আগে দাম বেড়ে হয়েছে ৫৯ টাকা। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রিতেও রোগী পিছু খাবারের জন্য বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৬১ টাকা।
পাভলভে এখনও রোগী পিছু ৪০ টাকা ৪৮ পয়সা বরাদ্দ। অথচ, চিকিৎসকদের মতে, অন্য রোগীদের তুলনায় সব মানসিক রোগীরই খিদে বেশি। কড়া ওষুধ খেতে হয় বলে তাঁদের পথ্যের প্রয়োজনও বেশি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের স্লোগান, ‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না’। অথচ তাঁর নিজের স্বাস্থ্য দফতরেই কী ভাবে এমন বৈষম্য চলছে, সে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মানসিক হাসপাতালের খাবার সরবরাহকারী একটি সংস্থার কর্তা বলেন, “৪০ টাকায় চার বেলার খাবার কী ভাবে দেওয়া সম্ভব? বাধ্য হয়েই অনেককে তাই দুধে জল মেশাতে হয়, পচা কুমড়ো বা আধপচা সিঙ্গাপুরি কলা কিনতে হয়।”
কিন্তু কেন পাভলভের রোগীরা এমন বৈষম্যের শিকার? পাভলভের সুপার রাঘবেশ মজুমদারের বক্তব্য, এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এখনও স্বাস্থ্য ভবন থেকে খাবারের কোনও শিডিউল এসে পৌঁছয়নি। তাই টেন্ডার ডাকতে পারছি না।” কোন শিডিউল? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দিনের কোন সময়ে কী খাবার, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কী খাবার, তার আলাদা চার্ট আসে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। কেন তিন মাসেও সেই চার্ট পাভলভে পৌঁছয়নি? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “চার্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওরাই এখনও টেন্ডার ডাকতে পারেনি। তাই দেরি হচ্ছে। আমরা এ বার দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।”
চাপান-উতোরের এ ছবি মানসিক রোগীদের করুণ অবস্থাটা আরও স্পষ্ট করছে বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা ওঁরা ঠিক ভাবে বোঝাতে পারেন না বলেই ওঁদের কথা কারও মনে থাকে না।
মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, “যা বাজারদর তাতে ৬০ টাকাতেও ঠিকঠাক খাবার দেওয়া মুশকিল। তাই লুম্বিনী বা বহরমপুর দারুণ ভাল খাবার পাচ্ছে, এটা ভাবার কোনও জায়গা নেই। বরং বাকিদের অবস্থাটা আরও কত করুণ, এ থেকেই সেটা স্পষ্ট হচ্ছে।”
তবে টাকা নয়, রোগীর খাবার ক্যালরিতে মাপা উচিত বলে মন্তব্য করেন রত্নাবলী। তিনি জানিয়েছেন, রাঁচির মানসিক হাসপাতালে মহিলাদের ২০০০ থেকে ২৩০০ ক্যালরি এবং পুরুষদের ২৮০০ ক্যালরির খাবার দেওয়া হয়। এ রাজ্যে তা মাপের কোনও বালাই নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.