ঘরে ঘরে জ্বর। হাসপাতাল ছেয়ে যাচ্ছে জ্বরের রোগীতে। অধিকাংশেরই রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ছে ডেঙ্গি। পাঁচ দিনের মাথায় সেরোলজি পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য ভরসা করতে গিয়ে অনেকের অবস্থার অবনতিও ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি বলে চিকিৎসকদের অভিমত। তার জন্য উপসর্গের ভিত্তিতে রোগীর ‘ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা’ এবং জ্বরের শুরুতেই ‘নন-স্পেসিফিক (এনএস) অ্যান্টিজেন’ পরীক্ষার উপরে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। ডাক্তারদের মতে, নন-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া গেলে চিকিৎসক অন্তত সেই পথে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে সেটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে রোগের দাপট বা রোগীর অবস্থা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
দ্রুত চিকিৎসা বলতে কী বোঝায়?
শিশু চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তী জানান, এনএস পরীক্ষার রিপোর্টে ‘পজিটিভ’ পাওয়া গেলে অযথা আতঙ্কিত হওয়া বা সঙ্গে সঙ্গেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই। দরকার রোগীর যথাযথ দেখভাল। শরীরে যাতে জল কমে না-যায়, সে-দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে বাড়ির নুন-চিনি মেশানো জল না-খাইয়ে বাজারে ‘ওআরএস’-এর যে-প্যাকেট পাওয়া যায়, তা কিনে জলে গুলে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সুব্রতবাবুর কথায়, “বাড়িতে জলে নুনের পরিমাণটা অনেক সময় গড়বড় হয়ে যায়। তার চেয়ে ওআরএসের প্যাকেট অনেক নির্ভরযোগ্য। তার দামও বেশি নয়।” |
‘শক’ উপসর্গ |
• হাত-পা ঠান্ডা
• নাড়ির গতি দ্রুত
• অতিরিক্ত দুর্বলতা
• গায়ে লালচে দাগ
• মুখ ফোলা
• টানা পেটে ব্যথা
• প্রস্রাব কমে যাওয়া |
|
বাড়িতে নজরদারি এবং শুশ্রূষার প্রসঙ্গেই আসছে ‘শক’-এর কথা। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, কোন কোন উপসর্গ থাকলে ‘শক’ হতে পারে, সেটা চিকিৎসকেরাই সব চেয়ে ভাল জানেন। তবে রোগীর বাড়ির লোকজনকেও সতর্ক রাখতে হবে।
কী ভাবে বোঝা যাবে যে, ‘শক’ লাগছে?
চিকিৎসকেরা ‘শক’-এর কয়েকটি উপসর্গের কথা বলছেন। সেই সব উপসর্গের মধ্যে আছে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা, নাড়ির গতি হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, গায়ে লালচে দাগ, মুখ ফোলা প্রভৃতি। সুব্রতবাবু বলেন, “রোগীকে বারবার ওআরএস খাওয়াতে তো হবেই। সেই সঙ্গে ‘শক’-এর উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে কি না, সেটা খেয়াল করতে হবে। যদি উপসর্গ দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া দরকার। তার আগে পর্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে দৌড়নোর কোনও যুক্তি নেই।”
এর আগে, ২০০৫ সালে মহানগরীতে ডেঙ্গির দাপট দেখা গিয়েছিল। তার তুলনায় এ বার রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ২০০৫-এ হেমারেজিক ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা এ বারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল বলে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ বার ‘শক’-এর ঘটনা অনেক কম। স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার তরফে তথ্য সরবরাহ নিয়ে যতই গোপনতা বজায় রাখার চেষ্টা হোক না কেন, শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে, চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ তা মেনে নিচ্ছেন। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “নন-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন পরীক্ষার রিপোর্টের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতা ভাল নয়। তাতে অকারণ আতঙ্ক ছড়াতে পারে। কিন্তু চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করে যা দেখছেন, তার সঙ্গে ওই রিপোর্টের বক্তব্য যদি মিলে যায়, তা হলে তার ভিত্তিতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।”
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ১৫টি বরোর অফিসারদের নিয়ে বৈঠক হয় পুরভবনে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ডেঙ্গিবাহী এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধে প্রতিষেধক তেল ও ওষুধের সরবরাহে যেন ঘাটতি না-থাকে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের ওএসডি তপনকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে পাঠানো হিসেব বলছে, এ-পর্যন্ত ১২০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু (আইজিএম পরীক্ষায়) মিলেছে। আর নন-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ‘কেস’-এর সংখ্যা ৩০০। তিনি বলেন, “শহরে পুরসভার অধীনে পাঁচটি রক্তপরীক্ষা কেন্দ্র আছে। ওই সব কেন্দ্রে অ্যান্টিজেন ও আন্টিবডি দু’টো পরীক্ষাই করা হচ্ছে।” খবর পেলেই পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত রোগীর বাড়ি গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করছেন। পরে রিপোর্টও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীর বাড়িতে। একই সঙ্গে মশা মারার জন্য চলছে তেল ছড়ানোর কাজ। |