আজ থেকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে তিন নম্বরের চেয়ারে কে? ষোলো বছর ধরে নতুন বলের ঝড়-ঝাপটা সামলানো রাহুল ‘দ্য ওয়াল’ দ্রাবিড় নন। আট টেস্টের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিরাট কোহলি। সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর যাঁর ১১৬। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ বলে যাঁকে ধরা হচ্ছে।
আজ থেকে ভারতের পাঁচ নম্বরের সিংহাসনে কে? অতীতে বহু বার মিডল অর্ডারের বিপন্নতা সামলে ‘ভেরি ভেরি স্পেশ্যাল’ ইনিংস খেলা ভিভিএস লক্ষ্মণ নন। তিন টেস্টের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চেতেশ্বর পূজারা। সর্বোচ্চ স্কোর? সেঞ্চুরি নেই, মোটে ৭২। কিন্তু সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এবং তাঁর টেকনিক নিয়ে এখনও তেমন প্রশ্ন নেই।
টেস্ট ক্রিকেটে একটা টিমের স্কোরবোর্ড কেমন দেখাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে তিন, চার এবং পাঁচ নম্বরে নেমে কে কী করলেন তার উপর। ভারতীয় ক্রিকেট দেখেছে অতীতে দেশে-বিদেশে কী ভাবে যাবতীয় বিপর্যয় সামলে টিমকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ‘দ্য ওয়ালে’র ব্যাট। ইডেন দেখেছে, ভিভিএস-দুর্গকে ভাঙতে না পেরে কী ভাবে থেমে গিয়েছে স্টিভ ওয়-র অশ্বমেধের ঘোড়া। কখনও একা, কখনও জুটি বেঁধে টিমকে বহু অবিস্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছেন দুই পোড়খাওয়া নায়ক। কোহলি-পূজারা ‘দ্রাবিড়’ বা ‘লক্ষ্মণ’ হয়ে উঠবেন কি না, সময় বলবে। এই দু’টো জায়গা আজকের পর থেকে তাঁদের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ হবে কি না, তার উত্তরও ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে এই দু’জন যে অগ্নিপরীক্ষায় বসছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। |
তবে শুধু এই দু’জন নন, আছেন আরও এক। যাঁকেও পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। তিনিভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাঁর পরীক্ষা তুলনায় সহজ। কারণ ০-৮-এর অভিশাপ কাটানোর প্রাথমিক পর্বে তিনি পাচ্ছেন এমন এক বিপক্ষকে, যাদের চালচুলো বলে কিছু নেই। যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও ল্যাজেগোবরে হয়ে সিরিজ হারে। মার্ক রিচার্ডসন থেকে সাইমন ডুলের মতো সে দেশের প্রাক্তনরা সিরিজ শুরুর আগেই লিখে দেন, ‘এই নিউজিল্যান্ডের কিচ্ছু হবে না।’ যাদের কিনা আবার পার্ট টাইম অধিনায়ক দিয়ে কাজ চালাতে হয়। চোটের বশে ভেত্তোরি দেশে, আর ভারতে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন রস টেলর। ভাঙা দল, কোচও নতুন। প্রতিপক্ষ হিসেবে তাই নিউজিল্যান্ড জলভাত হওয়া উচিত। এবং তাদের ওড়াতে পারলে ‘ধোনির ফিরে আসা’ উপন্যাসের মুখবন্ধটা অন্তত লেখা যাবে। নিজের ডেরায় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে দুরমুশ করে পরবর্তী চ্যাপ্টারগুলোর সংযোজন ঘটবে কি না, সেটা পরের প্রশ্ন।
ধোনি মুখে বলছেন, ০-৮ নিয়ে না ঘেঁটে উত্তরণের রাস্তা খোঁজা ভাল। প্রশ্ন তুলছেন, জুনিয়ররা এখন শিখবে না তো কবে শিখবে? কিন্তু গনগনে উত্তাপ ভারত অধিনায়ক টের পাচ্ছেন ভালমতো। বুধবার নেটে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং প্র্যাক্টিসের সময় ধারেকাছেও দেখা গেল না বদ্রীনাথকে। বদ্রীর খেলার সম্ভাবনাও কম। ছ’নম্বরে হয়তো রায়না। কিন্তু যে দু’জন ঢুকছেন তাঁরা কতটা সিরিয়াস নতুন ভূমিকা নিয়ে? পূজারাকে নেটে পড়ে থাকতে দেখা গেল। কিন্তু বিরাট এলেনই না প্র্যাক্টিসে! পিচ নিয়েও আলগা অসন্তোষ। নইলে কেনই বা ধোনির মুখ থেকে “এখানে একটাই টেস্ট খেলেছিলাম। যেটা আট দিনে শেষ হত,” মার্কা কথাবার্তা বেরোবে? এইচসিএ কর্তাদের জন্য তাঁর বার্তাটা খুব পরিষ্কার: দুই স্পিনার নিয়ে নামছি, এ বার স্পিনিং ট্র্যাক চাই।
এত কিছুর সঙ্গে আবার ফুটনোটের মতো যোগ হয়েছে উপ্পলে কিউয়িদের রেকর্ড। হরভজনের সেঞ্চুরি দিয়েও দু’বছর আগে কিউয়িদের বিরুদ্ধে কিস্তিমাত হয়নি। উল্টে গিলতে হয়েছে ম্যাকালামের ২২৫। হাতে ট্যাটু, চেনা ক্যারিশমা নিয়ে ম্যাকালাম এ বারও আছেন। ওপেন করবেন। মিডল অর্ডারের চেয়ে যাঁর আবার ওপেনিংয়ে রেকর্ড ভাল।
বুধবারের উপ্পলে ধোনির কপালের বলিরেখাগুলো দেখে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই! |