নেহরু কাপে জয় দিয়ে শুরু ভারতের
বৃষ্টির পর কৌশল বদলে কোভারম্যান্সের বাজিমাত
ডাচ যুগে পরিবর্তনের বার্তা দিতে শুরু করল ভারতীয় ফুটবলের নতুন প্রজন্ম!
বব হাউটনের লং বল তত্ত্ব মুছে দিয়ে মাটিতে বল রেখে পজেশনাল ফুটবলের বিশ্বব্যাপী ধারায় গা ভাসাতে শুরু করল উইন কোভারম্যান্সের ভারত।
ব্রিটিশ কোচের সাফল্য মনে রেখেও লিখতেই হচ্ছে, প্রথম রাউন্ডে অন্তত জিতে গেলেন বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি রেনাস মিশেলের ছাত্র। কেন?
এর আগে যে দু’বার ভারত নেহরু কাপ জিতেছে, প্রতি বারই রাউন্ড রবিন লিগে সিরিয়ার কাছে হেরে ফিরতে হয়েছিল হাউটনের দলকে। বুধবার সেই ধারা উল্টে গেলসুনীল ছেত্রীর হেডের গোলে। ক্লিফোর্ড মিরান্ডার অসাধারণ পাসে। অ্যান্টনি পেরিরার নাছোড় মনোভাবে। বিরতির ঠিক আগে একটা গোল, দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে আর একটা। সিরিয়ার ২-১ খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নেহরু স্টেডিয়ামে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় খেলা মাঝপথে বারো মিনিট বন্ধ করে রেখেছিলেন উজবেক রেফারি। তখন দেখা গেল কোভারম্যান্স একটা ল্যাপটপ নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড়চ্ছেন। পিছনে তাঁর ব্রিগ্রেড। সবাইকে হাত দিয়ে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বোর্ডে বোঝাতে লাগলেন সিরিয়াকে কী ভাবে পেড়ে ফেলা যাবে। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে গিয়ে দেখা গেল, বোর্ডে ঠিক গোলের কপিবুক একটা ছবি। একটু ভিতরে ঢুকে আসবেন দুই উইং ক্লিফোর্ড বা সঞ্জু। বিপক্ষ বল তাড়া করবে। ফাঁকায় থাকবেন সুনীল। তাঁকে বল তুলতে হবে। টিম সূত্রের খবর, অ্যান্টনিকে পরে নমিয়ে চমক দেওয়ার কথাও নাকি বলে দিয়েছিলেন জাতীয় কোচ। ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ডাচ কোচ স্বীকার করলেন, “বৃষ্টির পর স্ট্র্যাটেজি বদলে দিয়েছিলাম। একটু তুলে তুলে খেলতে বলেছিলাম। আরও আক্রমণাত্মক হতে বলেছিলাম। তাতেই প্রথম গোলটা এসেছে। প্রথম ২৫ মিনিট আমরা ভাল খেলিনি।”
সিরিয়ার বিরুদ্ধে গোলের পর সুনীল। ছবি: পিটিআই
ভাইচুং ভুটিয়ার সঙ্গে সুনীল ছেত্রীর তফাত ঠিক কোথায়? ভাইচুং ক্লাব এবং জাতীয় দলে ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ। কিন্তু সুনীল ক্লাবে জিরো, দেশের জার্সি গায়ে হিরো। একটা জায়গায় অবশ্য সিকিম আর দিল্লির ভূমিপুত্রের মিলকোনও কিছুতেই দমতে জানেন না। তীব্র চাপের মুখ থেকে ফিরে আসেন। যুদ্ধে জেতেন। এ বার আই লিগের কোনও ক্লাবে জায়গা হয়নি সুনীলের। ফলে তিনি এজেন্টের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে চলে গিয়েছেন পর্তুগলের স্পোর্টিং লিসবনে খেলতে। সেখানকার ‘বি’ টিমের হয়ে আঠাশ দিনে ম্যাচ খেলছেন কয়েকটি। এক সময় তাঁকে দলে নেওয়া হবে না, প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোভারম্যান্স হাল ছাড়েননি। বারবার ফোন করে ডেকে এনে বসিয়ে দিয়েছেন অধিনায়কের চেয়ারে। তাতে ভারতীয় শিবিরে যে মৃদু ক্ষোভ তৈরি হয়নি, তা নয়। কিন্তু ডাচ কোচ জানেন সাফল্য পেতে গেলে অনেক কিছু নিয়েই সমঝোতা করতে হয়। এটাই আধুনিক ফুটবল কোচিংয়ের ধারা। এবং কী আশ্চর্য, সুনীলকে রুখতে গিয়েই সিরিয়ার লম্বা লম্বা ডিফেন্ডাররা ব্যস্ত হয়ে রইলেন সারা ক্ষণ! ম্যাচের সেরার পুরস্কারটি পেলেন সুনীলই।
এ বারের ভারতীয় টিমটার সেন্টার সর্কেল থেকে গোল লাইন পর্যন্ত একটা সরলরেখা টানলে দেখা যাবে, তার উপর দাঁড়িয়ে আছেন চার সিনিয়র। স্ট্রাইকারে সুনীল ছেত্রী, মাঝমাঠে মেহতাব হোসেন, স্টপারে গৌরমাঙ্গী সিংহ এবং পিছনে সুব্রত পাল। তাদের ঘিরে বেশির ভাগই পরবর্তী প্রজন্মের নতুন ফুটবলার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোভারম্যন্সের স্ট্র্যাটেজিই ছিলপাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোল তুলে আনা। সেই জন্যই প্রথম গোলের আগে পর্যন্ত অন্তত তিনটি সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন হানি অলটেয়ার, মারডিকিয়ানরা। সুব্রতর সিরিয়ার দু’টো নিশ্চিত গোল আটকালেন অসাধারণ দক্ষতায়। একটা নিজেদের গোল লাইন থেকে ফেরালেন রাজু গায়কোয়াড়। সিরিয়ার শ’খানের সমর্থক এসেছিলেন মাঠে। ঢাকঢোল এবং দেশের পতাকা নিয়ে। তাঁরা অবশ্য ফিরে গেলেন অ্যান্টনির গোলে ২-০ হওয়ার পরই। স্টেডিয়াম জুড়ে তখন শুধুই ‘জিতে কা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’ আওয়াজে কাঁপছে।
ম্যাচটা দেখতে মাঠে এসেছিলেন জাতীয় দলকে এক সময় বহু সাফল্য দেওয়া কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পি কে বলছিলেন, “কোভারম্যান্স ভদ্রলোক ঠিক রোগটা ধরেছেন মনে হচ্ছে। লং বল আমাদের খেলা নয়। ওটা লম্বাদের খেলা। আমাদের সব তো বাবা বেঁটে বেঁটে। বৃষ্টি না হলে টিমটা আরও ভাল খেলত। সব থেকে যেটা ভাল লাগছে তা হল, টিমটার উপর কোনও চাপ রয়েছে মনে হল না।” পাশে বসে চুনী গোস্বামীর মন্তব্য, “এতগুলো নতুন ছেলে। ফলে ওঠা-নামা করে খেলতে সুবিধা হয়েছে। যখন সিরিয়া আক্রমণে গিয়েছে, একসঙ্গে নিজেদের গোলের মুখটা বন্ধ করে দিয়েছে।” উচ্ছ্বসিত ইন্দর সিংহও। “এক সময় তো মনে হচ্ছিল, সিরিয়াই জিতবে। কিন্তু সুনীলের গোলটার পর আমাদের ছেলেরা খেলাটা ধরে নিয়েছে।”
’৬২-র জাকার্তা এশিয়ান গেমসের স্বর্ণজয়ীদের সামনে মাচটা খেললেন সুনীল-নবিরা। এখন দেখার ‘সোনার ছোঁয়া’য়’ নেহরু কাপের হ্যাটট্রিকটা হয় কি না।

ভারত: সুব্রত, নির্মল, গৌরমাঙ্গী, রাজু, নবি, সঞ্জু (অ্যান্টনি) মেহতাব, লেনি, ক্লিফোর্ড, সুনীল, ফ্রন্সিসকো।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.