টোলগে ওজবে নিয়ে বিতর্কের ঝড় এ বার আছড়ে পড়ল ক্লাব জোটের সভায়। ঠিক হল এখন থেকে সারা দেশের ফুটবলারদের জন্য মডেল চুক্তিপত্র তৈরি করা হবে। সব ক্লাব যা মানবে। ভাইচুং ভুটিয়ার নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের কমিটিকে চুক্তিপত্রের মডেল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হল এ দিন। কমিটি তিন মাসের মধ্যে তাদের মডেল জোটের সভায় পেশ করবে। ভাইচুংদের তৈরি মডেল চুক্তিপত্র হাতে পাওয়ার পরই তা নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হবে। যাতে টোলগে-স্নেহাশিস-জন ডায়াসদের মতো ভবিষ্যতে ফের চুক্তিপত্র নিয়ে সমস্যা না হয়।
আজ, বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় দিল্লির ফুটবল হাউসে বসছে আই লিগ ক্লাবগুলির জোটের সঙ্গে ফেডারেশনের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক। সেখানে সবাই মিলে কী বলা হবে সেটা আলোচনা করতেই এ দিন ক্লাবগুলির সভা ডেকেছিলেন কর্তারা। জানা গিয়েছে সভায় ইস্টবেঙ্গল প্রতিনিধির সামনেই টোলগে নিয়ে লাল-হলুদ শিবির ও আই এফ এ যা করেছে তার তীব্র সমালোচনা করেন ভাইচুং। সিকিম ইউনাইটেডের প্রতিনিধি হিসাবে সভায় এসেছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। তিনি বলেন, “টোলগে নিয়ে আই এফ এ বা ইস্টবেঙ্গল যা করছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এতে ফুটবলের বড় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ক্লাবেরা মিলে জোট বেঁধে ফুটবলের উন্নতির কথা বলছি অথচ নিজেরাই ঝগড়া করছি। এ ভাবে চললে ফুটবলের অবস্থা হবে হকির মতো।”
ইস্টবেঙ্গলের চেয়েও ভাইচুংয়ের সমালোচনার অভিমুখ বেশি তীব্র ছিল আই এফ এ-র দিকে। তিনি বলে দেন, “আই এফ এ এই ব্যাপারটা নিয়ে আড়াই মাস ধরে সময় নষ্ট করছে। আই এফ এ এখন একটা মৃত সংস্থার মতো কাজ করছে। ওরা কোনও কিছুরই তাড়াতাড়ি সমাধান করতে পারে না। ঝুলিয়ে রাখে।” ইস্টবেঙ্গলের প্রতিনিধি হিসাবে সভায় আসা ম্যানেজার স্বপন বল প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এখানে এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে? ভাইচুং তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকেন নিজের বক্তব্য। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত তখন সেখানে বসে। ভাইচুংয়ের সঙ্গে তিন সদস্যের কমিটিতে আছেন প্রয়াগ ইউনাইটেডের নবাব ভট্টাচার্য এবং পুণে এফ সি-র চিরাগ তান্না।
ফেডারেশন বনাম ক্লাব যুদ্ধ চলছে বহু দিন ধরেই। আজকের মহাবৈঠকে দু’পক্ষ নামছে সম্মুখ সমরে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সরকারি ভাবে ক্লাব জোটের ঘোষণা হওয়ার কথা। ক্লাবগুলির দাবি, জাপানের জে লিগ বা অন্য দেশের লিগগুলোর মতো আই লিগের কমিটি হোক। ফেডারেশনের ছাতার বাইরে বেরিয়ে। যেমন বোর্ডের বাইরে ক্রিকেটের আইপিএলের আলাদা কমিটি আছে। জাপানের জে লিগের আদলে ক্লাবগুলো চাইছে কমিটিতে দু’পক্ষের পঞ্চাশ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব থাক। যাতে লভ্যাংশ থেকে প্রচার, সূচি থেকে স্টেডিয়াম- সব কিছুতেই ক্লাবগুলির প্রাধান্য থাকে। ফেডারেশনের স্পনসর আই এম জি রিলায়েন্সের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের উপরই নির্ভর করছে সব কিছু।
ফিফার নিয়মে জাতীয় শিবিরে ফুটবলার ছাড়া নিয়েও আলোচনা হবে। ক্লাবগুলি চাইছে বিশেষ কারণ ছাড়া ফিফার নিয়মেই শিবিরে ফুটবলার ছাড়তে। দাবির মধ্যে থাকবে ফেড কাপ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া। আই লিগের আলাদা কমিটি হয়ে গেলে টুর্নামেন্ট থেকে লাভ করা টাকা অন্য কোনও খাতেই ব্যয় করতে পারবে না ফেডারেশন। সেটাও সমস্যা। এ দিনের সভায় ফেডারেশনের দল পৈলান অ্যারোজের প্রতিনিধি ছিল না। বাকি সব ক’টি আই লিগ ক্লাবই উপস্থিত ছিল সভায়। ভাইচুং এই প্রথম সভায় যোগ দিলেন। এ দিকে, ফেডারেশন সচিব কুশল দাস বললেন, “কালকের বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খোলামনে আলোচনা করব ক্লাবগুলির সঙ্গে।”
আই লিগের এ বার প্রচণ্ড মাঠ সমস্যা। যুবভারতীতে রাতে ম্যাচ হওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। মুম্বইয়ের কুপারেজ তৈরি হয়নি। গোয়ার স্টেডিয়ামেও নানা ঝামেলা। এই অবস্থায় ক্রিকেটের আই পি এলের মতো বড় মাপের টুর্নামেন্ট করে আলোড়ন ফেলতে চাইছে ফেডারেশন। প্রায় ছশো কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ই পি এলের খেলোয়াড়রা-সহ বিদেশের বহু ফুটবলারের সেখানে খেলার কথা। ফেডারেশন সচিব বললেন, “আই লিগের ক্লাবগুলির আলোচনায় ফুটবলের আই পি এল নিয়ে আলোচনা হবে। স্পনসররা চাইছে সামনের বছর থেকে ওটা চালু করতে। কিন্তু সমস্যা মাঠ। অর্ধেক জায়গায় রাতে ম্যাচ করা সম্ভব নয়।” |