কিউয়ি-বধের ‘ব্লু-প্রিন্ট’ এখনও পুরো তৈরি নয়। টেস্টের প্রথম বল পড়তেও বাকি বেশ কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু তাতে কী? বিতর্কের নতুন ঘুণপোকা ফের ঢুকে পড়ল ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে।
যে দু’জন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। গত পাঁচ দিনই তো বারবার শিরোনামে আসছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও ভিভিএস লক্ষ্মণ। কিন্তু টেস্টের প্রাক-লগ্নে তা যে ছোবল মারবে, কে জানত?
ঘটনার প্রেক্ষাপট, মঙ্গলবারের রাত। টিম হোটেল থেকে সাড়ে আটটা নাগাদ গাড়ি করে মণিকোন্ডার দিকে রওনা দেন সচিন-সহবাগ। সঙ্গী গৌতম গম্ভীর ও জাহির খান। সব ছেড়ে মণিকোন্ডা কেন? কারণ, ওখানেই ভিভিএস লক্ষ্মণের নতুন বাংলো। বান্জারা হিলস ছেড়ে হালফিলে ওখানেই উঠেছেন ‘নিজাম’। গত রাতে নিজের নতুন বাংলোয় সচিনদের নৈশভোজে ডেকেছিলেন লক্ষ্মণ। রাত বারোটা পর্যন্ত ছিলেনও সচিনরা। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু গোলযোগ বাধল বুধবারের উপ্পলে।
|
এক ঘর সাংবাদিকের মাঝে ধোনি বলে বসলেন, লক্ষ্মণ তাঁকে ডিনারে ডাকেনইনি! ভারত অধিনায়কের মুখ থেকে এমন মন্তব্য শোনার পর রীতিমতো হতচকিত হয়ে পড়ে হায়দরাবাদের সাংবাদিককুল। জল্পনা শুরু হয়ে যায়, ধোনি-লক্ষ্মণের সম্পর্কের ফাটল তা হলে ঠিক কত বড়? ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সবারই থাকে, লক্ষ্মণেরও আছে। কিন্তু বলা হচ্ছে, সেটাকে খোলাখুলি এ ভাবে পেশ করার পিছনে যুক্তি কোথায়? সাংবাদিকদের প্রশ্নে “আমি ঠিক জানি না” বলে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু ধোনি কেন বলে বসলেন, “আমি যাইনি, কারণ নিমন্ত্রণ পাইনি”, তা নিয়েই জল্পনা।
ভিভিএস প্রসঙ্গে গোড়া থেকে নিজের অসন্তোষ বারবার বোঝাচ্ছিলেন। চোখা প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়ছিলেন বারবার। কিন্তু পাল্টা জবাব যে এ ভাবে ধোনি দেবেন, ভাবা যায়নি। ঠিক যেমন আঁচ করা যায়নি, লক্ষ্মণের ফোন না ধরা নিয়ে ভারত অধিনায়কের বিরক্তি কোন পর্যায়ে যেতে পারে। লক্ষ্মণের অবসরের পিছনে অর্ধেক দোষ যদি নির্বাচকদের উপর চাপিয়ে থাকে ক্রিকেটমহল, তো বাকি অর্ধেক বরাদ্দ হয়েছে ধোনির জন্য। ভারত অধিনায়ক ফোন করে তাঁকে বোঝালে ব্যাপারটা অনেক সহজে মিটত। কিন্তু ফোন করা দূরে থাক, লক্ষ্মণ অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে যখন ফোন করেছেন, ধোনি সেটা ধরেননি। শান্তশিষ্ট লক্ষ্মণকে স্বভাববিরুদ্ধ ঢঙে বলতে হয়েছে, “ধোনিকে জানাব কী ভাবে? ওকে তো ফোনে পাওয়াই যায় না।” যার উত্তরে ধোনি এ দিন একরাশ তাচ্ছিল্য ছড়িয়ে শুনিয়ে রাখলেন, “হ্যাঁ, ধরিনি। তাতে কী হয়েছে? শুনুন, আমি ফোন খুব একটা ধরি না। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা ব্যাপারটা জানেন। জানি, এটা আমার বদভ্যাস। শুধরোনোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। লাচ্ছু ভাইয়ের ফোনের সময়ও একই ব্যাপার ঘটেছে। আপনাদের কাছে বিতর্ক মনে হতে পারে। আমি সেটা মনে করি না।” লক্ষ্মণের স্বভাববিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় অবাক লাগেনি? এ বার সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আমি কী ভাবে বলব, কেন ওই কথাগুলো বলেছে? ও-ই বলতে পারবে সেটা।” |
কিন্তু তিনি নিজেও তো পরে ফোন করতে পারতেন লক্ষ্মণকে? আর বাকিদের সঙ্গে লক্ষ্মণকে কী ভাবে এক দাঁড়িপাল্লায় তোলা হচ্ছে? অবস্থা বেগতিক বুঝে পাল্টা প্রশ্নগুলো ওঠার আগেই থামিয়ে দিলেন উপস্থিত মিডিয়া ম্যানেজার। মাইক হাতে বলে দিলেন, “প্লিজ, টেস্ট নিয়েই শুধু প্রশ্ন করুন।” যদিও তাঁর আবেদনে বিশেষ কাজ হল না। ঘুরে-ফিরে ফের হাজির হলেন লক্ষ্মণ। এ বার দ্রাবিড়কে সঙ্গে নিয়ে। এই প্রথম দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ ছাড়া টেস্টে নামছে ভারত। ব্যাটিং লাইন আপ তো বটেই, দুটো স্লিপেও তাঁদের জুতোয় পা গলানোর মতো লোক পাওয়া যাবে তো? যা শুনে বিব্রত ধোনির উত্তর, “জানি সেটা। ওদের মিস করব। তবে তরুণদেরও শিখতে হবে। ওদের কাছে এটা বড় সুযোগ। ব্যাপারটাকে তো এ ভাবেও দেখা যেতে পারে।”
তা পারে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট ব্যর্থদের আর কবে ক্ষমা করেছে? মিডল অর্ডারকে বিপন্ন দেখালে বা স্লিপে ক্যাচ পড়লে প্রশ্নগুলো আবার ফিরে আসতে কতক্ষণ? |