ফি বছরই হাতির হানায় নষ্ট হয় বেশ কিছু শস্য। তাই শস্যহানি এড়াতে এ বার নয়া কৌশল নিচ্ছে বন দফতর। মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে একটি পদ্ধতি কার্যকর করা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। আগে বাঁকুড়াতেও এই পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে এবং তা সফল হয়েছে বলেও জানিয়েছে বন দফতর। বন দফতরের দাবি, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলে শস্যহানি এড়ানো গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া হয়েছে হিমাচলপ্রদেশের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রুদ্রাদিত্য চৌধুরীর। জেলার রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “শস্যহানি এড়াতেই আপাতত খড়িকাশুলি ও আমলাগোড়া রেঞ্জ এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।” দলমা থেকে আসা হাতির দল এই দু’টি এলাকায় রয়েছে। তাই বন দফতরের এই পদক্ষেপ।
কী এই পদ্ধতি?
বন দফতর সূত্রে খবর, চটের বস্তায় মোবিল ও লঙ্কাগুড়োর মিশ্রণ রেখে তা চাষজমির সীমানায় বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন দফতরের দাবি, এই মিশ্রণের তীব্র গন্ধ হাতি সহ্য করতে পারে না। ফলে, শস্য খেতে হাতির হানা এড়ানো যাবে। |
বুধবার আমলাগোড়া রেঞ্জের ছালাগোড়াতে ফসল বাঁচাতে জমির সীমানায় চটের বস্তা বিছানো হয়। এখানেও পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি কার্যকর করা হচ্ছে। এ দিকে, খড়িকাশুলি থেকে হাতির একটি দল বুধবার ভোরে বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহে গিয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক পেরিয়ে ওখানে পৌঁছয় দলটি। প্রায় ২৭টি হাতি রয়েছে দলে। তবে ৭-৮টি হাতি এখনও খড়িকাশুলিতে রয়েছে বলে অনুমান বন দফতরের। আমলাগোড়ার হদহদির জঙ্গলে আবার এদিনই হাতির একটি দল এসে ঢুকেছে। দলে ২৫-২৮ টি হাতি রয়েছে। লালগড়ের জঞ্জলেও ৭- ৮ টি হাতির একটি দল রয়েছে।
দলমা থেকে আসা তিনটি হাতির দল এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি দল খড়িকাশুলি ও তার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বিঘা জমির চাষ নষ্টও হয়েছে। কোথায় কত ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তার রিপোর্ট সংগ্রহ করা শুরু করেছে বন দফতর। বৃষ্টির অভাবে অনেক জায়গায় সবে মাত্র ধান রোয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু হাতির দল এই সদ্য রোয়া ধান মাড়িয়েই চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শস্যহানি এড়াতেই নয়া কৌশল বন দফতরের। তাঁদের দাবি, আসাম-সহ কয়েকটি রাজ্যে এই পদ্ধতি কার্যকর করে শস্যহানির পরিমাণ কমানো গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় ঘন জঙ্গল রয়েছে। চাষবাসও ভালো হয়। তাই প্রতি বছর ফসল খেতে এলাকায় আসে হাতির দল। হাতির হামলা থেকে রেহাই পেতে এক সময় হাতি ধরার পরিকল্পনা করা হয়। ঠিক হয়, দলমা থেকে আসা গড়বেতার জঙ্গলের হাতির দল থেকে কেড়ে নেওয়া হবে দলের ছোট সদস্যদের। ফলে হাতির দল ফের এলাকায় আসতে ভয় পাবে।
প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা করা হয়, এ বছর ছোট ২টি হাতি ধরা হবে। এ জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে কুনকি হাতি নিয়ে আসা হবে। যদিও এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার আগে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি কার্যকর করা শুরু করল বন দফতর। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এ ভাবে চটের বস্তা বিছিয়ে সীমানা দিলে হাতির দল ওই জমিতে ঢুকবে না। ফলে ফসলের ক্ষতি কমবে।” |