বিজেপি-র নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডে জোট সরকারের দু’বছর পার হয়ে গিয়েছে। এ বার বাকি সময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি জানাতে তৈরি হচ্ছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। এর এ ক্ষেত্রে তারা পাশে পাচ্ছে দোটের আর এক শরিক অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আজসু) সমর্থনও। জেএমএমের তরফে বলা হয়েছে, জোট সরকার গঠনের সময়েই ঠিক হয়, দু’বছর পর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি জেএমএমকে ছেড়ে দেবে বিজেপি। কারণ জোটে বিজেপি ও জেএমএম সম-সংখ্যাক বিধায়ক নিয়েই রয়েছে। দুই দলেরই বিধায়ক সংখ্যা ১৮। আজসু’র ৬ বিধায়ক ও জেডিইউয়ের বিধায়ক সংখ্যা ২।
মুখ্যমন্ত্রীর পদে আনুষ্ঠানিক দাবি জানাবার আগে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জেএমএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী ২৫-২৬ অগস্ট কেন্দ্রীয় কমিটির দু’দিনব্যাপী বৈঠক বসবে বোকারোয়। বৈঠকে রাজ্য সরকারের প্রতিটি দফতরের কাজের পর্যালোচনাও হবে। কাজের মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিক হিসেবে আগামী দিনে জোটে থাকা বা না-থাকার প্রশ্নেও এই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জেএমএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
বোকারোর বৈঠকে দলীয় সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে জেএমএম-এর সমস্ত শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেএমএম-এর কোর কমিটির সম্পাদক বিনোদ পাণ্ডে জানিয়েছেন, “দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা স্থির হবে ওই সভায়।” তিনি বলেন, “বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠনের শর্ত অনুযায়ী প্রথম দু’বছর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটি পেয়েছে বিজেপি। দু’বছর বাদে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটি জেএমএম-এর পাওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ওই বিষয়টি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে। এ ছাড়াও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি-র সঙ্গে জোট সরকারের শরিক হিসেবে জেএমএম-এর থাকা বা না-থাকা নিয়েও খোলাখুলি আলোচনা হবে।”
রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝাড়খণ্ডের বর্তমান জোট সরকার গঠনের পিছনে সরকারি শরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত কোনও তাগিদ ছিল না। মূলত রাষ্ট্রপতি শাসন এড়িয়ে, সেই মুহূর্তে রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে জোট সরকার গঠনে হাত মিলিয়েছিল বিজেপি-জেএমএম-আজসু। আর সে কারণেই সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপি-র সঙ্গে শরিকদের, বিশেষত জেএমএম-এর মত পার্থক্য গোড়া থেকেই রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও, সরকারের মূল চালিকাশক্তি জেএমএম-এর হাতে। এ নিয়েও বিজেপি-জেএমএমের টানাপোড়েন শুরু হয় সরকার গড়ার অল্পদিনের মধ্যেই। পাশাপাশি, সরকারি কাজের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে শুরু হয় ব্যক্তিত্বের সংঘাতও।
সরকারি কাজের অনেক ক্ষেত্রে শরিকদের অন্ধকারে রাখার অভিযোগ ওঠে প্রধান শরিক বিজেপি-র বিরুদ্ধে। এমনকী সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে, জেএমএম প্রধান শিবু সোরেনকে চেয়ারম্যান করে গঠিত সমন্বয় কমিটিকেও উপেক্ষা করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার বিরুদ্ধে। জেএমএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “নামেই সমন্বয় কমিটি রয়েছে। কমিটির কোনও কাজই নেই। দীর্ঘ দিন ধরে এই কমিটিকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। আমরা ওই কমিটিকে কর্যকর ভূমিকায় ফিরিয়ে আনতে চাইছি।” সুপ্রিয়বাবু জানান, বোকারোয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সমন্বয় কমিটিকে নতুন করে সক্রিয় করার বিষয়েও বিশদে আলোচনা হবে। |