বিদ্বেষ ও প্ররোচনামূলক এসএমএস ছড়ানোর অভিযোগে পুণে থেকে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসারেরা জানান, ধৃতদের ছড়ানো এসএমএস থেকেই পুণেতে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের মধ্যে হিংসার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। অন্য দিকে, উত্তর-পূর্বে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে হামলা চালানোর ঘটনায় এ দিন আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষও বুধবার জানিয়েছেন, প্ররোচনামূলক সব রকম ‘মেসেজ’, বিতর্কিত ছবি লাগানো ‘পেজ’ ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই এমন বেশ কিছু বার্তা মুছে ফেলা হয়েছে। যারা ওই আপত্তিকর ছবি বা বার্তা আপলোড করেছিল, সেই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। উত্তর-পূর্বের বেশ কিছু পড়ুয়া এ দিন গুয়াহাটি থেকে বিমানে মহারাষ্ট্র যান। কেরল সরকার আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা করেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় শরণার্থীদের দ্রুত ঘরে ফেরা নিয়ে অসম প্রশাসন সংশয়ে। রাজ্যের হিসাবে মঙ্গলবার থেকে ১টি শিবির বন্ধ হলেও ২২৩টি শিবিরে ২,৫৬,৮৯১ জন থেকে গিয়েছেন। শরণার্থীদের ঘরে ফেরার জন্য চাপও দেওয়া হচ্ছে না। কোকরাঝাড়ের জেলাশাসক জয়ন্ত নারলিকর জানান, জেলার ১০৫ ত্রাণ শিবিরে থাকা ৫৭৭১৫ জনকে ঘরে পাঠানোর জন্য গ্রাম পরিষদ বিকাশ কমিটিকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। কয়েকটি শিবিরে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসন এই সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্কুলে পুরোদমে ক্লাস শুরু করে দিতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এ দিন কোকরাঝাড়, চিরাং, ধুবুরি ও বঙ্গাইগাঁওয়ের বিশিষ্টজন ও নাগরিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। গগৈ বলেন, “কোনও অনুপ্রবেশকারীকেই পুনর্বাসন দেওয়া হবে না। মানুষের মন থেকে সন্দেহ, আতঙ্ক ও বিদ্বেষ কাটানোই প্রথম কাজ। সরকারের তরফে ত্রাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করার করা হচ্ছে।”
যুগ্ম স্বরাষ্ট্রসচিব শম্ভু সিংহের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আজ কোকরাঝাড় ও চিরাং-এর ত্রাণ শিবিরগুলি ঘুরে দেখেন। শম্ভু সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, “শিবিরের পরিবেশ স্বাভাবিক। আশা করি শীঘ্রই পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা যাবে। যাঁরা ফিরতে ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা নিজের গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসতে পারেন। সরকারের তরফে ১২২টি পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।”‘বহিঃশক্তি’র ইন্ধন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিংহ বলেন, “সিবিআই তদন্ত করছে। সত্য নিশ্চয়ই প্রকাশ পাবে।” তাঁর দাবি, “বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে প্ররোচনা ছড়ানোর কাজ পাকিস্তানের দিক থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের প্রমাণ রয়েছে।” তবে শম্ভু সিংহের কথায়, “নেপাল বা বাংলাদেশ থেকে চোরাকারবারিরা অস্ত্র, মাদক, নারীপাচার চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে অসম সংঘর্ষকে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়।” তবে কেন্দ্রীয় দলের আশ্বাস সত্ত্বেও এ দিন ধুবুরি, গৌরীপুর, বিলাসিপাড়ার রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। বন্ধ ছিল দোকানপাটও। এর মধ্যেই ফের গুলি চলেছে কোকরাঝাড়ে। বিকেলে ধুবুরি ও কোকরাঝাড় সীমানায় বাঙালডোবা এলাকায় বড়োদের গুলিতে জখম হন এক ব্যক্তি, দু’জন শ্রমিকের খোঁজ মিলছে না। মণিপুরেও ঘরমুখী ছাত্র ও কর্মচারীদের ঢল কমছে না। সরকারের চিন্তা, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে সমাজবিরোধীরা। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। |