রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ, পরিকাঠামো থেকে গিয়েছে তলানিতেই। অস্ত্রোপচারের সংখ্যা এক বছরে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হলেও অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা বাড়েনি। নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কাজ অনেকসময় করতে হচ্ছে চিকিৎসককেই। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। তাই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে এবার সরব হলেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পরিকাঠামো উন্নয়নের আশ্বাসও মিলেছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল বলেন, “অপারেশন থিয়েটার কম থাকায় কিছুটা তো সমস্যা হচ্ছেই। নতুন ভবনে আরও ৭টি অপারেশন থিয়েটার চালু করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ২০১০ সালে ছোট-বড় মিলিয়ে ২ হাজার ৮৮৫ জনের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২২-এ। অর্থাৎ গড়ে মাসে ১৫৪টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার সেই একটিই। প্রসূতি বিভাগের জন্য আলাদা দু’টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তার বাইরে রয়েছে ৪টি অপারেশন থিয়েটার। যার ১টি বরাদ্দ অস্থি বিভাগের জন্য, একটি চক্ষু ও অন্যটি নাক-কান-গলা বিভাগের। চিকিৎসকদের অভিমত, রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না ঘটায় কাজের গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়ত বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুকুমার মাইতি বলেন, “বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও তা দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব। কিন্তু পরিকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি। নাহলে কাজে গতি বাড়ানো কঠিন।”
প্রথমেই প্রয়োজন অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা বৃদ্ধি। পর্যাপ্ত নার্সও নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও কম। অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে টেবিল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওয়ার্ডে পৌঁছনো, টেবিল পরিষ্কার করা, যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করে সংক্রমণমুক্ত করা এ সবই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কাজ। কিন্তু মেডিক্যালে এই কর্মীর সংখ্যা এতটাই কম যে, অনেক সময় তা চিকিৎসকদেরও করতে হয়! সুকুমারবাবুর কথায়, “পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। পরিকাঠামো উন্নয়নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চেষ্টা করছেন।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ভবনে নতুন সাতটি অপারেশন থিয়েটার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও কর্মীর অভাবে তা চালু করা যায়নি। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। মন্ত্রী পরিকাঠামো উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |