কেন্দ্র আচমকা টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজ্যের ১৩টি ইএসআই হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত দু’টি আইসিটিসি গত পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। এর মধ্যে একটি মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে চলত, অন্যটি ছিল কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে।
আইসিটিসি অর্থাৎ ‘ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার।’ রক্তে এইচআইভি রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা হয় এই কেন্দ্রে। পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ হলে এইচআইভি আক্রান্তের কাউন্সেলিং, তাঁর পরিবারের কাউন্সেলিং, তিনি কী ভাবে জীবনধারণ করবেন, কী খাবেন, তাঁর ওষুধের ব্যবস্থা কোথায় ও কী ভাবে হবে, সব কিছুর ব্যবস্থা এখান থেকে করা হয়। আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইচআইভি আক্রান্তদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা নেটওয়ার্ক তৈরিতেও আইসিটিসি সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা ন্যাকো থেকে ওই কেন্দ্র দু’টির জন্য টাকা আসত। রাজ্য শ্রম দফতরের অভিযোগ, লিখিত কিছু না জানিয়েই গত এপ্রিল থেকে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে ন্যাকো। তাদের আরও অভিযোগ, দিল্লিতে ইএসআই কর্পোরেশনকে এইচআইভি আক্রান্ত দরিদ্র শ্রমিকদের স্বার্থে কেন্দ্র দু’টি চালানোর দায়িত্ব নিতে বলা হলেও তারা টালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে।
মানিকতলা ও কামারহাটি হাসপাতালের আইসিটিসি-তে নথিভুক্ত এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। প্রতি মাসে নতুন করে রক্তপরীক্ষা করাতে আসতেন আরও প্রায় ৭০০-৮০০ জন। কারণ, রাজ্যের সব ইএসআই হাসপাতাল থেকে এই কেন্দ্র দু’টিতে আক্রান্তদের রেফার করা হত। কেন্দ্র দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা কয়েক হাজার রোগী। উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হুগলি, হাওড়ার কল-কারখানায় এই দু’টি আইসিটিসি থেকে এইচআইভি সংক্রান্ত যে প্রচারাভিযান চালানো হত, তা-ও বন্ধ রয়েছে।
এমনিতেই কারখানার শ্রমিকেরা এইচআইভি সংক্রমণের ব্যাপারে ‘ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী’-র মধ্যে পড়ে। সেখানে মূলত শ্রমিকদের জন্য তৈরি ইএসআই হাসপাতালেই আইসিটিসি সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন রাজ্য শ্রম দফতর। মহাকরণ সূত্রের খবর, শ্রম দফতর দিল্লির ইএসআই কর্পোরেশনের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। রাজ্য শ্রম দফতরের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের জন্য ইএসআই কর্পোরেশনের যে ‘প্রোমোটিভ অ্যান্ড প্রিভেনটিভ ফান্ড’ রয়েছে, তাতে প্রায় ২ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। কর্নাটকে ইতিমধ্যে নির্ধারিত ফান্ড থেকে ইএসআই কর্পোরেশন মোট ১০টি ইএসআই হাসপাতালে আইসিটিসি চালাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তারা সেটা করছে না।
এখন প্রশ্ন হল, ন্যাকো কেন টাকা দেওয়া বন্ধ করল? ইএসআই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষেরা জানিয়েছেন, এই অবস্থার জন্য দায়ী ন্যাকো ও ইএসআই কর্পোরেশনের মধ্যে চলতে থাকা ঠান্ডা লড়াই। গত বছর মানিকতলা আইসিটিসি-তে এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার খোলার অনুমোদন দিয়েছিল ন্যাকো। তখন এ ব্যাপারে ইএসআই কর্পোরেশন আগ্রহ দেখায়নি। এর পর থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। যদিও ইএসআই কর্পোরেশন এ কথা স্বীকার করেনি।
রাজ্য শ্রম দফতরের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি তথা অতিরিক্ত সচিব দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত মানুষের চিকিৎসার ব্যাপার, তাই রাজ্য খুবই চিন্তিত। ইএসআই কর্পোরেশনকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম, যাতে রাজ্যের জন্য নির্ধারিত প্রোমোটিভ অ্যান্ড প্রিভেন্টিভ ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে কেন্দ্র দু’টি চালানো হয়। ওরা গা করেনি। রিজিওনাল বোর্ড মিটিংয়েও বিষয়টি তুলেছি। মন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। দেখা যাক।” ইএসআই কর্পোরেশনের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র মেডিক্যাল কমিশনার সমীর চৌধুরীর বক্তব্য, “রাজ্য ফান্ডের ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিষয়টি কর্পোরেশনের সদর দফতরের কর্তাদের বিচার্য। তাঁরা আলোচনা করে দেখছেন।” মানিকতলা ও কামারহাটি আইসিটিসি-তে নথিভুক্ত অশোক উপাধ্যায়, লোকনাথ সাউয়েরা জানিয়েছেন, দু’টি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে রেফার হওয়া অনেকে ঘুরে যাচ্ছেন। রক্ত পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁরা বুঝতেও পারছেন না, এইচআইভি আছে কি না। এআরটি-র প্রয়োজন হলেও নিতে পারছেন না। |