ডেঙ্গিতে মৃত্যু, কবুল করতেই কাটল বেলা
কটা রোগ কতটা ছড়াচ্ছে, তা জানতে পারলে তবেই আমজনতা সে বিষয়ে সচেতন হয়। গড়ে ওঠে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে এর ধার দিয়েই যাচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভা। উল্টে, তথ্য গোপনের চেষ্টা এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে যে, তা থেকে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি বেড়ে চলেছে।
এত দিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গি ছড়ানোর খবর নিয়ে ‘লুকোচুরি’ চলছিল। মঙ্গলবার কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘হেমারেজিক’ ডেঙ্গিতে এক রোগীর মৃত্যু হলে সেই খবরও বিকেল পর্যন্ত স্বীকার করতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারা। সন্ধ্যা ছ’টার পরে তাঁরা জানান, ন্যাশনাল মেডিক্যালে লব খান (৩৮) হেমারেজিক ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন। তাঁর রক্তে অণুচক্রিকা (প্লেটলেট) অত্যন্ত কমে গিয়েছিল। তিন ইউনিট অণুচক্রিকা দেওয়ার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এক সপ্তাহ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকার পরে এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, মৃত লব খান রানিগঞ্জের বাসিন্দা। তাঁর রক্তে ‘আইজিএম’ পরীক্ষায় ডেঙ্গি পাওয়া গিয়েছে, তবে ‘ম্যাক এলাইজা’ পরীক্ষার রিপোর্ট মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত আসেনি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে এ দিন জানানো হয়, এ বছর এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ১০৭ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ২৭ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি সূত্রে খবর, প্রকৃত সংখ্যাটা এর তিন গুণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য দফতরের এই গোপন করার প্রবণতা সাধারণ মানুষের আরও বেশি বিপদ ডেকে আনছে। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক চিকিৎসকের কথায়, “চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে তবেই মানুষ সাবধান হবে। ঢাকঢাক গুড়গুড় করে ক্ষতি আরও বাড়ছে।” মঙ্গলবারের দিনভর বৃষ্টি ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনুকূল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এতে রাস্তার জমা জল ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘরের ভিতরে ফুলদানি বা কুলারের জমা জল তো বৃষ্টি ধোবে না। সেটা পরিষ্কারের জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর যত সত্য গোপনের চেষ্টা করবে, মানুষের উদাসীন আচরণ তত বাড়বে।”
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের শেষ দিকে ডেঙ্গি বাড়তে থাকার পরেই তথ্য গোপনের একটা প্রবণতা স্বাস্থ্যকর্তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ায় পরিস্থিতি সামলাতে ডেঙ্গি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সেখানে মন্ত্রী স্বীকার করেন, রাজ্যে ডেঙ্গি-আক্রান্তের যে সংখ্যা তাঁরা জানাচ্ছেন, তা ঠিক নয়। কারণ, বেসরকারি জায়গা থেকে ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের পরিকাঠামো বা নিয়ম তাঁদের নেই। সল্টলেক এলাকায় ডেঙ্গি প্রবল হারে ছড়ানোর পরে এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল অভিযোগ করেছিল, স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের সংবাদমাধ্যমের কাছে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানাতে বারণ করে দিয়েছেন। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এই রাখঢাক করার অর্থ কী বা এতে রোগ প্রতিরোধে কতটা সুবিধা হবে, এর কোনও উত্তর অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তারা দিতে পারেননি।
এ দিকে, মশা মারতে ধোঁয়া-কামানের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় তা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছিল। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামে বলা হয়েছে, যেখানে ডেঙ্গি বা ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে, সেখানে ধোঁয়া-কামান দাগা যেতে পারে। এতে পূর্ণবয়স্ক মশা মরে, ফলে নতুন মশা জন্মানো কমে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.