কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য একই দিনে জোড়া সুখবর!
• অবসরের বয়ঃসীমা না-বাড়ালেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন বাবদ বকেয়া টাকা দেওয়া হবে বলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে চিঠিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। মঙ্গলবার সেই চিঠি পৌঁছেছে রাজ্যের কাছে।
• আগামী নভেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নিয়মেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক ও ক্রীড়া প্রশিক্ষকদের পদোন্নতি প্রকল্প (কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিম বা ক্যাস) চালু করছে রাজ্য সরকার। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মঙ্গলবার মহাকরণে এ কথা জানিয়েছেন।
২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বর্ধিত বেতনক্রম চালু করার কথা বলেছিল ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। বর্ধিত বেতনের একটা অংশ কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, শিক্ষকদের অবসরের বয়ঃসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর না-করলে বকেয়া অর্থ দেওয়া হবে না। কিন্তু কেন্দ্রের এই শর্ত মানতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। অবসরের বয়স এবং বর্ধিত বেতনের বকেয়া দু’টি বিষয়কে ‘ডিলিঙ্ক’ বা আলাদা করার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের কাছে চিঠি পাঠান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সেই চিঠিরই উত্তর এসেছে। তাতে জানানো হয়েছে, শিক্ষকেরা ৬০ বছরে অবসর নিলেও বকেয়া অর্থ দেওয়া হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবসরের বয়ঃসীমা নির্ধারণের এক্তিয়ার যে রাজ্য সরকারের, তা-ও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। আসলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক বৈঠকেই অবসরের বয়ঃসীমা এবং বকেয়া অর্থের বিষয়টিকে আলাদা করার ব্যাপারে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজ্য সরকারি সূত্রের খবর, বকেয়া অর্থ দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ওই তথ্যের অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। বর্ধিত বেতনের যে-অংশটা রাজ্যের দেওয়ার কথা, তার কিছুটা শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইতিমধ্যে পেয়েও গিয়েছেন। কেন্দ্রের প্রদেয় টাকা না-পাওয়ায় বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তাঁরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এ দিনের চিঠিকে স্বাগত জানান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
কেন্দ্রের তরফে ওই আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে উৎসাহ দিতে চায়। শুধু ডিগ্রি বাড়ানো নয়, তাঁরা যাতে গবেষণার কাজেও আরও বেশি করে যুক্ত হন, সেই জন্য এ বছর নভেম্বর থেকে ‘ক্যাস’ চালু হচ্ছে।” ওই পদোন্নতি প্রকল্পের জন্য বছরে অতিরিক্ত ৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। এই পদ্ধতি চালু হলে ১৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা, গ্রন্থাগারিক এবং অন্যেরা উপকৃত হবেন বলে রাজ্য সরকারের দাবি।
তবে শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের ঘোষণায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এ বছর নভেম্বর থেকে ক্যাস চালু হলে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই বঞ্চিত হবেন। ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, এ বছর নভেম্বর থেকে নয়, ইউজিসি-র নির্দেশিকা জারি করার সময় থেকেই ক্যাস বলবৎ করতে হবে।
২০১০-এর ৩০ জুন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক, স্পোর্টস ইনস্ট্রাক্টর বা ক্রীড়া প্রশিক্ষক ইত্যাদি পদে কর্মরতদের উন্নতির জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল ইউজিসি। শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’র সাধারণ সম্পাদক তরুণ নস্কর বলেন, “ইউজিসি যখন নির্দেশিকা জারি করেছিল, তখন থেকেই ক্যাস-এর সুবিধা দিতে হবে। এ বছর নভেম্বর থেকে কেন? এর মধ্যে যাঁদের পদোন্নতি হওয়ার কথা, তাঁরা তো তা হলে বঞ্চিত হবেন!” পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র সাধারণ সম্পাদক তরুণ পাত্র জানান, মৌখিক আশ্বাসে তাঁদের আস্থা নেই। তিনি বলেন, “এমন আশ্বাস অনেক পেয়েছি। সরকারি নির্দেশিকা না-দেখে মন্তব্য করব না। তবে নভেম্বর থেকে নয়া পদ্ধতি কার্যকর হলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে বঞ্চিত হবেন। এই নির্দেশিকা আমরা মানব না। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।”
কী বলছে রাজ্য সরকার?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “ইউজিসি-র নির্দেশিকা রূপায়ণ করেনি সিপিএম (ক্ষমতায় থাকাকালীন)। রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ভাল না-হওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ক্যাস নিয়ে আলোচনা করি। অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, পুজোর আগেই কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে। উনি কথা রেখেছেন। এখন ২০১০-এর ৩০ জুন থেকে কার্যকর করার দাবি না-জানিয়ে সরকারের এই উদ্যোগকে সকলের স্বাগত জানানো উচিত।” |