খেলার খবর
‘গুটির খেলা’
(হারিয়ে যাওয়া খেলা-পর্ব ২৬)
বাসস্ট্যান্ড কিংবা রেল স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রী, হাসপাতালে রোগীর পরিজন কিংবা আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া মানুষজনের কাছে এককালে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম ছিল বিভিন্ন গুটির খেলা। কারণ এই খেলার জন্য তেমন কিছু উপকরণ লাগে না বললেই চলে। দুই প্রকারের ভিন্ন রং কিংবা আকৃতির ইট, খোলাম কিংবা পাথরের কুচি হলেই চলে। প্রয়োজনে ভিন্ন রংয়ের বারুদের দেশলাই কাঠি দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।
মাটিতে ছক কেটে ওই খেলা হয়। তবে প্রস্তুতি নিয়ে খেলার সময় গুটি হিসেবে কালো রংয়ের তেঁতুল বীজ যাঁর প্রতলিত নাম ‘কাঁই’ কিংবা চন্দনের লাল বীজ ব্যবহার করা হয়। তিন, নয় ও ষোলোটি গুটি নিয়ে তিনপ্রকারে ওই খেলা চলে। তিনটি খেলাই মূলত একক ভাবে দু’জন খেলোয়াড় নিয়ে চলে। তিনটি খেলার জন্য ছকও তিন ধরনের। তিনগুটি খেলায় একটি ১/১ ফুট বর্গাকার ঘরকে কোনাকুনি, পাশাপাশি এবং লম্বালম্বি ৪টি রেখা দ্বারা ভাগ করা হয়। তিনটি করে ভিন্ন রং কিংবা ভিন্ন আকৃতির মোট ৬টি গুটি বসানো হয় মুখোমুখি তিনটি ঘরে। নিজেদের পছন্দের রং কিংবা আকৃতির গুটির সামনে একজন করে খেলোয়াড় বসে খেলা শুরুর আগে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া কিংবা টস করে কে আগে গুটির চাল দেবে তা স্থির হয়। নিয়ম হল একের পর এক গুটি চাল দিয়ে দিয়ে পাশাপাশি, কোনাকুনি, লম্বালম্বি ভাবে নিজের নিজের রংয়ের গুটি বসাতে হবে। যে প্রথম নিজের একই রংয়ের তিনটি গুটি ওই ভাবে একই সারিতে বসাতে পারবে সে প্রতিপক্ষকে এক ‘চিক’ দেবে। খেলা শেষে চিকের সংখ্যা অনুযায়ী জয়ী নির্ধারণ হয়।
ন’গুটি খেলায় দু’টি ভিন্ন রং কিংবা আকৃতির ৯টি করে মোট ১৮টি গুটি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কোনাকুনি রেখা টেনে ৭টি বিভেদ রেখা যুক্ত করে মোট ১৯টি ঘর বিশিষ্ট ছক কাটা হয়। মাঝের ঘরটি ফাঁকা রেখে দুই দিকের ৯টি করে ঘরে নিজেদের গুটি বসান খেলোয়াড়রা। এরপর আগের মতোই কে আগে দান চালবে তা স্থির হয়। তিনগুটির ক্ষেত্রে আগে দান চালার আগ্রহ লক্ষ করা গেলেও এ ক্ষেত্রে কেউ আগে দান চালতে চায় না। এ ক্ষেত্রে দানচালা হয় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে। কারণ গুটি সরানোর পর পেছনের ঘর খালি হলেই বিপক্ষ সেই গুটি টপকে নিজের গুটি সেই ঘরে বসানোর সুযোগ পেয়ে যায়। তাহলেই কাটা পড়ে প্রথম পক্ষের গুটি। একই সঙ্গে একাধিক ঘর খালি হলে একাধিক গুটি কাটাও চলে। ওই ভাবে কাটাকাটিতে আগে যার সমস্ত গুটি কাটা পড়ে সেই খেলোয়াড় ‘চিক’ খায়। একই প্রক্রিয়ায় খেলা হয় ১৬ গুটিরও। এ ক্ষেত্রে ১৬টি করে দুই রংয়ের কিংবা আকৃতির গুটি প্রয়োজন। ছকটিও ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে ৮টি রেখা দ্বারা বিভক্ত একটি বর্গাকার ঘরের সঙ্গে দু’টি রেখা দ্বারা বিভক্ত দু’টি ত্রিভুজ দুই দিকে যুক্ত থাকে।
রাজনগরের সুবিমল সাধু, বোলপুরের কঙ্কালীতলার অশোক দাসরা বলেন, “হাতের কাছে সময় কাটানোর মতো কিছু না পেলে আমরা পাথর কিংবা ইটকুচি কুড়িয়ে গুটি খেলতে বসে যেতাম। এখনও বাঁধানো পুকুরঘাট, ঠাকুরদালানের পাকা মেঝেতে এমন অনেক গুটি খেলার ছক আঁকা আছে। কিন্তু আজকাল আর কাউকে তা খেলতে দেখি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.